
এবিএনএ: ১৫ আগস্টের প্রথম শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী শুক্রবার (৫ আগস্ট)। ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতির পিতার হত্যাকারী ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। রক্তাক্ত ১৫ আগস্টে শেখ কামালই প্রথম শহীদ।
শহীদ শেখ কামাল ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী, আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ‘৬৯-র গণঅভ্যুত্থান ও ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির ৩২নম্বর সড়কস্থ বাসভবন আক্রমণ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য ছিলেন।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক ছিলেন শহীদ শেখ কামাল। শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন।
তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে থিয়েটার আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথমসারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন “স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী”। শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনয় শিল্পী হিসেবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শহীদ শেখ কামাল দেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই’ খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা পুকুর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও শেখ কামালের জন্মদিন পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। পরে অনুষ্ঠিত হবে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়া দিনটি উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড, আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ক্লাবের পরিচালক, কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা। এ সময় তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দেবেন বিওএ কর্মকর্তা ও ক্রীড়াবিদরা। বিকাল ৫টায় অলিম্পিক ভবনের নীচতলার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত হবে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল।
Share this content: