আমেরিকালিড নিউজ

মার্কিন স্টেট গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি

এবিএনএ : ভোটের মাধ্যমে দুঃশাসন আর অপশাসনের জবাব দিলেন আমেরিকানরা। গত ১০ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান শাসিত কংগ্রেসের বিভিন্ন পদক্ষেপে অতীষ্ট ভোটাররা ভার্জিনিয়া এবং নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের দুই রিপাবলিকান গভর্নরকেই ধরাশায়ী করেছেন। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগে থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই নির্বাচনকে ট্রাম্পের জন্যে টেস্ট কেস হিসেবে অভিহিত করা হয়। ট্রাম্পের শাসনের পক্ষে জনগণ কতটা সন্তুষ্ট তারই স্পষ্ট প্রকাশ ঘটলো গোপন ব্যালটে। ভার্জিনিয়া গভর্নর হিসেবে জয়ী হলেন ডেমক্র্যাট রালফ এস নর্দ্যাম। তিনি লে. গভর্নর ছিলেন। রালফ এস নর্দ্যাম ভোট পেয়েছেন ৫৩.৯ শতাংশ। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিপাবলিকানে এডোয়ার্ড জিলেসপাই পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ।

অপরদিকে, নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হিসেবে জয়ী হলেন ফিলিপ মার্ফি। ৫৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিপাবলিকান কিম গুয়াডেঙ্গো পেয়েছেন ৪২.৪ শতাংশ ভোট। কিম ছিলেন লে. গভর্ণর।

উল্লেখ্য, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বত্র বৃষ্টি ঝরেছে। তবুও ভোটারের উপস্থিতিতে কোন হেরফের ঘটেনি। ভার্জিনিয়া এবং নিউজার্সিতে বসবাসরত বাংলাদেশি-আমেরিকানরাও একই আমেজে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ভোটের এ আমেজ ডেমক্র্যাটরা ধরে রাখতে সক্ষম হলে সামনের বছরের নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের অহমিকা খর্ব করা সহজ হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

নিউইয়র্ক সিটির ১১০তম মেয়র নির্বাচন হলো মঙ্গলবার। একইসাথে সিটি প্রশাসনের গুরুত্বপর্ণ পাবলিক অ্যাডভোকেট ও কম্পট্রোলার পদ ছাড়াও ৫ বরোর প্রেসিডেন্ট, ২ জন ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি ও ৫১ জন সিটি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল এবং বিচার বিভাগে ছুটি চলে। এই সিটির বাংলাদেষি অধ্যুষিত সবকটি কেন্দ্রের আশপাশেই ছিল বাংলা লেখা নির্দেশিকা। কেন্দ্রের ভেতরেই বাংলায় লেখা পোস্টার নজরে এসেছে। ব্যালটেও ছিল বাংলা। এমনকি বাংলায় অনুবাদক ছিলেন ভোটারকে সহায়তার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ভিন্ন এক আমেজে ভোট গৃহীত হলো। কুইন্সের হিলসাইড এলাকা নিয়ে গঠিত কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ প্রার্থী ছিলেন বাংলাদেশি তৈয়বুর রহমান হারুন। এজন্য এ এলাকার বাংলাদেশিরাও উৎসবে আমেজে ভোট দিয়েছেন। তবে তিনি জয়ী হতে পারেননি সকল বাংলাদেশির ভোট লাভে সক্ষম না হওয়ায়।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনরায় জয়ী হলেন। রিপাবলিকানরা আটঘাট বেধে নেমেছিলো, কিন্তু ভোটারের মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়নি। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন-বিদ্বেষ, জাতীয়তা এবং বর্ণ-বিদ্বেষ, লিঙ্গ-বিদ্বেষী বক্তব্য এবং বিভিন্ন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ ভোটারররা রিপাবলিকানদের প্রতি আগ্রহী হননি। বলা যেতে পারে যে, ঘৃণাভরেই প্রত্যাখান করেছেন ভোটাররা। অপরদিকে, ধর্ম এবং বর্ণগতভাবে বিল ডি ব্লাসিয়োর অবস্থান ছিল খুবই প্রবল। ইমিগ্র্যান্টদের স্বার্থ রক্ষায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি তিনি। ফেডারেল অনুদান বন্ধের হুমকিতেও মাথানত করেননি ইমিগ্রেশন ইস্যুতে। অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের নিরাপত্তায় গোটা প্রশাসনকে তিনি ব্যবহার করছেন প্রকাশ্যেই। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে বদ্ধ-পরিকর ভোটারেরা বিল ডি ব্লাসিয়োকে আবারও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে অধিষ্ঠিত করলো। তার কাছে ধরাশায়ী হলেন রিপাবলিকান নিকোল ম্যালিয়োটাকিস। এই সিটির রেজিস্টার্ড ভোটারের ৭০ শতাংশের বেশি ডেমক্র্যাট হলেও ইতিপূর্বেক রিপাবলিকান প্রার্থীরাও ভোটারের মধ্যে জাগরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে বিগত কয়েক টার্মেই রিপাবলিকান মেয়রের দখলে ছিল এই ডেমক্র্যাট সিটি। কিন্তু গরিব ও মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিচিত বিল ডি ব্লাসিয়ো সে প্রথাকে চূর্ণ করে টানা দু’টার্মের জন্যে মেয়র হলেন। তিনি পেয়েছেন ৬৬.২ শতাংশ ভোট। তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন মাত্র ২৮ শতাংশ।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button