মাদক আইনের অপপ্রয়োগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

এবিএনএ: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অপপ্রয়োগ করে কোনো পুলিশ বা র্যাবের কর্মকর্তা কিংবা অন্য যে কেউ হোক, কাউকে হয়রানি করলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সোমবার ঢাকা ক্লাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এসপিও সেমিনারের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন আইনে সুনির্দিষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যার কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেফতার করা হবে। এর আগের আইনে এ রকম অনুচ্ছেদ না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন নিজেরাই কারো পকেটে মাদকদ্রব্য ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানি করেছে। নতুন আইনে এ হয়রানির মাত্রা বাড়ার আশঙ্কাও থাকছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা যথাযথ বলেছেন যে, আমরা মাদক পরিবহনকারী, মাদক ব্যবহারকারী, অর্থ লগ্নিকারীদের ধরছি। এদের জন্য কঠোর সাজা আমাদের আইনে রয়েছে। আগেও সাজা ছিল। তবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা র্যাবের কর্মকর্তা কিংবা অন্য যে কেউ হোক; কাউকে আমরা ছাড়ছি না। নতুন মাদক আইনেই এটা বলা আছে। যারা এ ধরনের হয়রানি করবে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ মাদকের আগ্রাসনে চলে এসেছিলাম। তাই প্রধানমন্ত্রী মাদক বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। সবার সহযোগিতায় খুব শিগগির আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব। আমরা এখন স্বপ্ন দেখছি আমাদের যুবকদেরকে রক্ষা করতে পারব। মাদকদ্রব্য আইনটিকে আমরা নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছি। কীভাবে এটার প্রয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আইনে বলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের অভিযানে প্রায় ২৫০ জন মানুষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। তাদেরকে মাদক ব্যবসায়ী দাবি করা হচ্ছে তারপরও মাদক আগের মতোই আসছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি এটাও না, আবার শতভাগ সফল হয়েছি এটাও না। তবে আশা করছি ভবিষ্যতে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। আমাদের যে অভিযান এটা অব্যাহত থাকবে।’ বন্দুকযুদ্ধে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই যারা মাদক উৎপাদন বা বিপণন করে তারা সবসময় অস্ত্র ব্যবহার করে। কারণ তারা অধিক মুনাফা করে। এটা কালো টাকা, নিজেদের বাঁচাতেই তারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে। আমাদের দেশেও তাই হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। তার পরিণাম কী হচ্ছে সেটা আপনারা দেখতেই পারছেন।’
উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এই অনুমোদনের কথা জানান। নতুন আইন সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী পাঁচ গ্রামের বেশি ইয়াবা পরিবহন, মজুত, বিপণন ও সেবনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন, কোকেনসহ সমজাতীয় মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। আগের আইনে মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ১৫ বছরের কারাদণ্ড।
Share this content: