জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

মহাসড়কে মহাভোগান্তি

এবিএনএ : খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক। কোথাও কোথাও মাইলের পর মাইল চলাচলের অনুপযোগী। আর বৃষ্টির সময় ধারণ করে ভয়াবহ রূপ। যান আর জলজটে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো সড়কপথ। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কগুলোতে প্রতিদিন চাপ বাড়ছে গাড়ির। সঙ্গে ঢাকার পথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছে ট্রাকভর্তি গরু। সব মিলিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার এ যাত্রা সুখকর হচ্ছে না এবারও। মহাসড়কে মহাভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।যদিও সড়ক বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত রাস্তা মেরামতের। তবে মহাসড়কে মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ করার এ প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান যাত্রীরা।

গতকাল দেশের বিভিন্ন রুটের মহাসড়কের খবর জানান প্রতিনিধিরা। তাদের দেওয়া বর্ণনায় ফুটে উঠেছে ভোগান্তির চিত্র। ঈদের এখনো সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও কোথাও কোথাও মাইলের পর মাইল যানজটের কবলে পড়ছে মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও নিস্তার মিলছে না। খানাখন্দে পড়ে গাড়ি বিকলের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অনেক ছোট-বড় গর্ত। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বেঁধে দেওয়া ১০ দিন সময়ের মধ্যেও এ মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। এখনো চলছে সংস্কারকাজ। টাঙ্গাইল শহর বাইপাস থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বেহাল। মহাসড়কটির সদর উপজেলার বিক্রমহাটি ও রসুলপুর, কালিহাতী উপজেলার পৌলী, এলেঙ্গা এলাকার অবস্থা যাচ্ছেতাই। চলাচলের অনুপযোগী এসব রাস্তায় যানজটে পড়তে শুরু করেছেন যাত্রীরা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ছিল দীর্ঘ যানজট। আগামী কয়েকদিন আরও বেশি চাপ বাড়বে যানবাহনের। এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত যাত্রীরা।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে গতকাল সকাল থেকেই অনেকটা ধীর গতিতে চলে যানবাহন। মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কজুড়েই ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি। তীব্র এ যানজট ছিল উভয় পথেই। বিশেষ করে ঢাকার দিকে একেকটি যানবাহনকে ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই ব্যয় করতে হয় তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। গত মঙ্গলবার রাতে মেঘনা সেতুর ওপর চারটি মালবাহী ট্রাক বিকল হওয়ার পর থেকেই এ যানজটের সূত্রপাত। এর সঙ্গে যুক্ত হয় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর এই অতিরিক্ত যানবাহন সামাল দিতে সেতুর এক পাশের যানবাহন আটকে দিয়ে অন্য পাশের যানবাহন ছাড়া হয়। এতে যেপাশ আটকে রাখা হয়, তখন তা দীর্ঘ আকার ধারণ করে। এ ছাড়া দাউদকান্দি সেতুতে টোল ও ওজন মাপার মেশিনে ধীরগতির কারণকে দায়ী করছেন যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকরা।কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তাই খানাখন্দে ভরা। সড়ক বিভাগও বলছে, সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১৫টি জেলার অন্তত ১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে।সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাাম মহাসড়কের বিকল্প কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় থেকে উজানিসার পর্যন্ত অংশের প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে বড়-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।অন্যদিকে গতকাল বিকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে কোনাবাড়ী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। মূলত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে পানি ও খানাখন্দের কারণে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় রাস্তার একপাশে সংস্কারকাজ চলায়ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যানজট পরিস্থিতি পরিদর্শনে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যান। এ সময় তিনি বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি হবেই। বৃষ্টিকে ভিলেন বানিয়ে অজুহাত সৃষ্টি করে রাস্তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী থাকবে এটা হয় না। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার, কনট্রাক্টরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা মাঠে থাকবেন। সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ, থানাপুলিশ সবাই মাঠে থাকবে।বন্যার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ৫০টি পয়েন্টে এক থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা এখনো পানির নিচে। এবার আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। কারণ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button