জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

ভোট আর পেছাচ্ছে না

এবিএনএ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর পেছাচ্ছে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি করলেও কমিশন বৈঠক করে এই ভোটের দিন আর না পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বেলা ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা এই বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও অন্যান্যা কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বেলা সোয়া ৪টায় রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস বিফ্রিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিন সপ্তাহ নির্বাচন পেছানোর দাবি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পেছানো ইসির কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। ফলে নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই বলে ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, ‘গতকাল ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ কমিশনের নিকট এসে বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করেন। সেজন্য আজকে নির্বাচন কমিশন তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করেছেন এবং বৈঠক করেছেন। বৈঠক করে উনারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি আইনি ও সাংবিধানিক বিষয় আছে, হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে কাজগুলো করতে হবে। যেমন- যদি পুনঃনির্বাচন করতে হয়, উপ-নির্বাচন করতে হয়, নির্বাচনে অনিয়ম হলে তদন্ত করা, গেজেট প্রকাশ করা, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ ইত্যাদি। তিনি বলেন, এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা জানুয়ারির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিয়ে থাকেন এবং লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন থাকেন। সবদিক বিবেচনা করে এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নির্বাচন পেছানো ইসির কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক নয়, আমরা এ দেশের নাগরিক, যে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার তাদের বিষয়গুলো আগে বিবেচনা করব। তবে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সবসময় আমরা স্বাগত জানাই।

ঐক্যফ্রন্ট একটি অভিযোগ করেছে, সরকার যেভাবে বলছে আপনারা সেভাবেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করতে পারে। অন্য কারও সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন কখনও গ্রহণ করেনি। তবে, নির্বাচন কমিশনের অংশীজন রাজনৈতিক দল। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে লেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সকালে (বৃহস্পতিবার) আমি বলেছিলাম, নির্বাচনের ২ থেকে ১০ দিন আগে সেনাবাহিনী নামবে। আসলে আমি বিষয়টি বুঝাতে পেয়েছিলাম সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর জন্য ১০ দিন আগে থেকে তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তবে নির্বাচন কবে কখন কীভাবে সেনা মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

গতকাল বুধবার ইসির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দাবি করে যে, ভোটের তারিখ তিন সপ্তাহ পেছাতে হবে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা হবে। ওইদিন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জানুয়ারিতে অনেক বিষয় আছে। তারপরও নির্বাচন কমিশন বসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এরপর এ বিষয়ে জানানো হবে। অপরদিকে গতকালই ইসির সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পরিষ্কার বলেছি, ৩০ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়েছেন। আর নয়। একদিনও নয়, একঘণ্টাও নয়। এমন অবস্থায় ভোট আর না পেছানোর কথা আজ ইসির পক্ষ থেকে জানানো হলো। প্রসঙ্গত পুনঃনির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।

Share this content:

Related Articles

Back to top button