বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

ভুয়া কাবিননামা দেখিয়ে এমপির নালিশ, ছাত্রলীগে তোলপাড়

এবিএনএ : অবিবাহিত ছাত্রলীগ নেতাকে বিবাহিত প্রমাণ করার জন্য ভুয়া কাবিননামা সংগঠনের অলিখিত অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে ছাত্রলীগে। দলীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার ছাত্রলীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বিবাহিত ছাত্রনেতাদের সংগঠনের পদ ছেড়ে দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরপর যশোর জেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীকে বিবাহিত প্রমাণ করার জন্য শেখ হাসিনার কাছে ভুয়া কাবিননামা জমা দেন যশোরের একজন দলীয় সংসদ সদস্য।
গত সোমবার যশোর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ভোটের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রওশন ইকবাল শাহী এবং সাধারণ সম্পাদক হন ছালছাবিল আহমেদ জিসান।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীর নামে সম্মেলনের দিন কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। ভোট গ্রহণের পূর্বেও সম্মেলনস্থলে দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় কারো নামে কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য; কিন্তু ওই সময়ে এমন কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসে, বিবাহিত কোনো নেতা সংগঠনে থাকতে পারবে না।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের বিবাহিত নেতাকর্মীদের পদত্যাগের জন্য পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরপরই যশোরের আওয়ামী লীগ দলীয় একজন সংসদ সদস্য গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে রওশন ইকবাল শাহীর বিয়ের ওই কাবিননামার অনুলিপি জমা দেন। এরপর এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী এনায়েতকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। কাজী এনায়েত ইতিমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছেন।
বিষয়টি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া কাবিননামায় দেখানো হয়েছে, যশোর সদরের ১২ নম্বর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের নিকাহ রেজিস্ট্রার আখতার হোসেন বিয়ে পড়িয়েছেন। এ তথ্য যাচাই শুরু হলে আখতার  হোসেন বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে লিখিত পত্র পাঠান যশোর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। ওই পত্রে তিনি বলন, রওশন ইকবাল শাহীর বিবাহ সম্পাদনের কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই।
ফতেহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে তথ্য চান যশোর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ ঘোষ। তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন তৈরি করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, শাহীর বিয়ের কোনো তথ্য প্রমাণ ফতেহপুর কাজী অফিসে নেই।  ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুই  নেতাকে দেওয়া হয়েছে এমনকি  আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছেও জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোহাগ ও জাকির।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘যশোর ছাত্রলীগের সভাপতির নামে বিয়ের যে কাবিনটি আমাদের হাতে এসেছিল, সেটি আসলে ভুয়া কাবিননামা। বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।
এদিকে কাবিননামায় যে মেয়ের সঙ্গে শাহীর বিয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই মেয়ের বাবা এহসানুল কবির সাগর। শনিবার যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের পর কিছু লোক আমার বাড়ি যাচ্ছে। এরপর জানতে পারি মেয়ের বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়। যা আমার এবং আমার মেয়ের মান সম্মানের ব্যাপার। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার আশা করছি। এই রকম বানোয়াট কিছু আর যেন না হয়। বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার চার মেয়ে। একজনেরও বিয়ে হয়নি। দুই মেয়ে ঢাকায় থাকে।’

Share this content:

Related Articles

Back to top button