বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

ভাড়া লোক দিয়ে জাপার কাউন্সিল হবে না: কাদের

এবিএনএ : ভাড়া করা লোক দিয়ে আগে জাতীয় পার্টিতে কাউন্সিল হত স্বীকার করে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, এখন থেকে জাতীয় পার্টির প্রতিটি কমিটি গঠিত হবে প্রকৃত নেতাকর্মীর ভোটে। আগের মত ভাড়া করা লোক দিয়ে কোন কাউন্সিল হবে না।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সভায় জেলা নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি একথা বলেন। দলের এই বিভাগীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে আর মনোনয়ন বানিজ্য চলবে না, কমিটি পেতে লবিং করতে হবে না। কেন্দ্র থেকে কোন কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। নিজ নিজ এলাকায় তৃণমূলের মতামত নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে।’

জিএম কাদের বলেন, ‘এখন থেকে হঠাৎ আবিস্কার ও বহিস্কারের ঘটনা জাতীয় পার্টিতে হবে না। ত্যাগীদের মূল্যায়ণ করে পদোন্নতি দেওয়া হবে। বিনা কারণে কাউকে বহিস্কার করা হবে না। গণতান্ত্রিকভাবে সবার মতামতে জাতীয় পার্টি পরিচালিত হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টিকে একটি সম্ভাবনাময় দল উল্লেখ করে জাপার এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামীতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পার্টির। তাই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের হতাশ হলে চলবে না। দলকে আরো শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করতে হবে।’ আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘লাঙ্গল বাংলাদেশ একটি জনপ্রিয় প্রতীক। যে কোন আসনেই লাঙ্গলের ভোট ও সমর্থন আছে। আমরা যদি দলকে শক্তিশালী করতে পারি, গণমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসূচি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে জাতীয় পার্টি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারবে।’

আলোচনায় অংশ নেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, মেহেরপুর জেলা সভাপতি আব্দুল হামিদ, খুলনা মহানগর সেক্রেটারি মোল্লা শওকত হোসেন বাবু, পিরোজপুর জেলা সভাপতি সেকান্দর মুকুল বাবলু, বরগুনা জেলা সভাপতি মাঈনুল হাসান, সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, নড়াইল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফিরোজ, বরিশাল জেলা সভাপতি জহুরুল হক জহির, বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট একে এম মর্তুজা আবেদিন, ঝালকাঠি জেলা সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মাগুরা জেলা সভাপতি রবিউল হক, ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি নুরুদ্দিন আহমেদ। পার্টির মহাসচিব ও সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, ‘মহাজোটে জাতীয় পার্টির ৫৭টি আসনে নির্বাচন করার কথা ছিলো। কিন্তু আমাদের নেতৃত্ব পরিবর্তন ও কোন্দলের সুযোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই সংসদে জাতীয় পার্টির মাত্র ২২টি আসন।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পরে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে জাতীয় পার্টির ক্ষতি করেছে। বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলা করেছে। এখন থেকে আর ছাড় দেওয়া হবেনা, যেখানেই আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা করবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখন থেকে সংসদে ও রাজপথে জাতীয় পার্টি সমানতালে কথা বলবে বলে জানান রাঙ্গা।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, সৈয়দ দিদার বখত, আলমগীর সিকদার লোটন, পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল আলম রুবেল, অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, দিদারুল কবির, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমির আহমেদ ডালু, সুলতান আহমেদ সেলিম, কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, সুলতান মাহমুদ, খোরশেদ আলম খুশু, ইসহাক ভূইয়া, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, শাহজাহান মনসুর, লে. কর্নেল (অব.) সাব্বির, শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন, এমএ রাজ্জাক খান রাজ্জাক, সুমন আশরাফ, সুজন দে, যুব সংহতি নেতা দ্বীন মোহাম্মদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের চারদিনের এই বিভাগীয় সভা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মতিঝিল এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তারা শ্লোগানে শ্লোগানে আশপাশ এলাকা মুখর করে তোলেন। দীর্ঘদিন পরে পার্টির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সামনে মনের কথা তুলে ধরতে পারবেন- এমন প্রত্যাশায় সবার মাঝে একটা উৎসব মুখর অবস্থা বিরাজ করছিলো। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন যুগ্ম ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ ক্বারী ঈছা রুহুল্লাহ আসিফ। জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে মূল সাংগঠনিক সভায় নেতা-কর্মীরা প্রাণ খুলে মতামত দেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button