ভারতকে রুখে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

এবিএনএ : ভারত ম্যাচেও দর্শকের হাহাকার। ম্যাচ শুরুর দিকে কাঞ্চনঙ্ঘা স্টেডিয়ামে দর্শকছিলো হাজার খানেক। স্বাগতিক দর্শকের সামনে শুরুটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। শুরুর ২০ মিনিটে বল দখলের লড়াইয়েও এগিয়ে ছিলো গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। তবে ম্যাচ গড়ানোর সাথে সাথে ম্যাচে ফেরে ভারত। একের পর এক ভারতীয় আক্রমনে রক্ষণে দেয়াল হয়ে দাড়ান তিন ডিফেন্ডার মাসুরা, শিউলি, সামসুন্নাহ। পোস্টের নিতে সাবিনা আক্তার ছিলেন অবিচল। এদের নৈপুন্যেই সাফ মহিলা ফুটবলে ভারতের সঙ্গে গোলশূণ্য ড্র করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে হারানোর পর ভারত ম্যাচে কৌশলে পরিবর্তন আনেন ছোটন। স্বপ্না কৃষ্ণাকে একটু নিজে নামিয়ে এসে সাবিনাকে উপরে খেলান এই কোচ। তার সুফল প্রথমার্ধেই পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে সেটা ধরে রাখে ‘বি’ গ্রুপ সেরা হয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ছোটনের শিষ্যরা। আগামীকাল ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সাবিনাদের প্রতিপক্ষ ‘এ’ গ্রপ রানার্সআপ মালদ্বীপ। ‘বি’ গ্রপ রানার্সআপ হওয়া ভারতের প্রতিপক্ষ নেপাল।
তিন বারের সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে আগে খেলা ছয় ম্যাচের ছয়টিতে হেরেছিলো বাংলাদেশ। তবে এদিন ৯ মিনিটেই দারুণ একটি আক্রমণ রচনা করেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু দাংমে গ্রেস বলে শট নেয়ার আগেই গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার দৌড়ে গোললাইন ছেড়ে বঙের বাইরে এসে বল ক্লিয়ার করেন। ১৫ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার মোক্ষম একটা সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। ডানদিক থেকে নেয়া সাবিনা খাতুনের ফ্রি কিকে সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ানো বলে কৃষ্ণা শট নেন। কিন্তু এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল বাইরে চলে যায়। ২৩ মিনিটে বঙের বাইরে গ্রেসিকে ফাউল করে বিপদ ডেকে এনেছিলেন মাইনু মারমা। কিন্তু সে যাত্রায় সেট পিচ থেকে বেঁচে যায় লাল-সবুজ শিবির। সাস্মিতা মালিকের নেয়া ফ্রি কিকটি গোল লাইনে দাঁড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নেন সাবিনা আক্তার। পরের মিনিটে সুস্মিতার কর্ণার পাঞ্চ করে রক্ষা করেন এই গোলরক্ষক। ভারতীয় পত্রিতায় সাবিনাকে নিয়ে বড় বড় রিপোর্ট হয়েছে। তাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষকের খেতাব দিয়েছেন এখানকার সাংবাদিকরা। প্রথমার্ধে কমপক্ষে পাঁচটি গোল খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে প্রমান গতকাল মাঠে দিলেন এই গোলরক্ষক। ৩৪ মিনিটে আবারও বাংলাদেশের ত্রানকর্তা গোলরক্ষক সাবিনা। এবার বালা দেবির অসাধারন দক্ষতায় রক্ষা করেন তিনি। ভারত ম্যাচে অপরিবর্তিক একাদশ নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ৫৮ মিনিটে অফসাইডে বাতিল হয় বাংলাদেশের গোল। ডানদিক দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে বল নিয়ে পোস্টে ডোকেন সাবিনা। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিজে পোস্টে না মেরে বল বাড়ান অফসাইডে দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণা রানীকে। স্বভাবত কৃষ্ণার দেয়া গোল অফসাইডে বাতিল করেন ভুটানের রেফারি প্রেমা থেওয়াং। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে আবারো দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভুত হন গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী সাবিনা আক্তার। এবার বদলী হিসেবে মাঠে নামা সানজুর নেয়া ক্ষিপ্রগতির শট দারুন দক্ষতার সাথে রুখে দেন। ম্যাচের ৭২ মিনিটে একই সাথে দু’জনকে পরিবর্তন করেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মিডফিল্ডার মাইনুর পরিবর্তে স্ট্রাইকার মুনমুন আক্তার এবং কৃষ্ণা রানীর স্থলাভিসিক্ত হন মার্জিয়া। ৭৬ মিনিটে আবারো নিজেকে সেরা প্রমান করেন বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার। এবার বঙের ভেতর থেকে নেয়া গ্রেসির শট ফিষ্ট করেন। ফিরতি বলে বালা দেবী শট নিলেও অফ সাইডের কবলে পড়ে যান। তিন মিনিট পরেই কমলা দেবীর নেয়া শটটি ক্রস বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সাস্মিতা মালিকের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন সাবিনা আক্তার। শেষ মিনিটে শিউলি আক্তারের গোললাইন সেভে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ : সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক), সাবিনা আক্তার, শিউলি আজিম, সামসুন্নাহার, নারগিছ খাতুন, মাসুরা পারভীন, মাইনু মারমা, জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না (অনুচিং মোগেনি), কৃষ্ণা রানী সরকার, মারিয়া মান্ডা।
Share this content: