জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বিনা ঘুষে রাজউকের সেবা পাওয়া যায় না : টিআইবি

এবিএনএ : ঘুষ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে কোনো সেবা পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। আজ বুধবার দুপুরে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‌‘রাজউক থেকে বিনা ঘুষে সাধারণ মানুষ সেবা পেয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল। রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের একাংশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে ঘুষ নেওয়া হয়। রাজউক ও দুর্নীতি একাকার এবং সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘রাজউকে দুর্নীতি ও অপব্যবস্থা রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার প্রতিষ্ঠানকে আবার নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে গোড়া থেকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছিল। সেটিই অনিয়ন্ত্রণ, অব্যবস্থাপনা, নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন ও রক্ষককে ভক্ষকের ভূমিকায় রূপান্তরিত করার জায়গাটি তৈরি করেছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাড়পত্র এবং নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সেবা গ্রহণের জন্য রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য জরিপ বাবদ ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহক থেকে নেওয়া হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের কাছ থেকেও একই পরিমাণ নেওয়া হয়। রাস্তা প্রশস্ত দেখানোর জন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয় রাজউক। ১০তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাবদ ব্যক্তিকে দিতে হয় ১৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আর ডেভেলপারদের দিতে হয় এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০তলার ঊর্ধ্বে ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাবদ ডেভেলপারদের দিতে হয় তিন থেকে ১০ লাখ টাকা। ১০তলা পর্যন্ত নকশা অনুমোদনের জন্য ব্যক্তিকে দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা এবং ডেভেলপারদের দিতে হয় দুই থেকে ১০ লাখ টাকা। ১০তলার বেশি ঊর্ধ্ব ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য ব্যক্তিকে কত দিতে হয় সে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের ঘুষ হিসেবে দিতে হয় ১৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। বড় প্রকল্পের জন্য ডেভেলপারদের দিতে হয় ১৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া নকশা অনুমোদনের জন্য পরিদর্শনে গেলে রাজউক কর্মকর্তাদের দিতে হয় পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফাতেমা আফরোজ ও ফারহানা রহমান গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এসময় টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়েরও উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Back to top button