আমেরিকা

বিদায় ভাষণে ওবামা : আমেরিকা আরো শক্তিশালী

এবিএনএ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আবেগঘন বিদায় ভাষণে বলেছেন, আট বছর আগের তুলনায় আমেরিকা এখন আরো শক্তিশালী ও ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে তিনি বলেন, এবার ধন্যবাদ বলার পালা।

নিজ শহর শিকাগোয় দেওয়া ভাষণে তার শাসনামল সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। সব দিক থেকে আমেরিকানদের পরস্পরের চিন্তাভাবনার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলেন ওবামা। এ ছাড়া জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ, আমেরিকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, কিউবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি।

ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ৪৭ বছর বয়সে ক্ষমতায় আসা ওবামার বয়স এখন ৫৫ বছর। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আশা ও প্রত্যাশার শত দ্বার খুলে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হন। এবং ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। ২০ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যাদেশ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। হয়তো ওবামার নেওয়া মৌলিক নীতিগুলো সরকারের পরিকল্পনা থেকে ছেটে ফেলবেন ট্রাম্প।

২০ জানুয়ারি ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এ সম্পর্কে ওবামা বলেন, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে ‘হলমার্ক’। তবে তিনি বলেন, সবার জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ আছে- এই জ্ঞান ছাড়া আমাদের গণতন্ত্র চলতে পারে না।

২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিজয় ভাষণ শিকাগোয় দিয়েছিলেন ওবামা। বিদায় ভাষণও দিলেন সেখানে। তবে নানা নাটকীয়তাপূর্ণ ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ওবামার বিদায় ভাষণ আমেরিকানদের জন্য ভিন্ন মাত্রায় গুরুত্ব বহন করছে। ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যে দ্বিধাবিভক্ত মার্কিন জাতির জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ওবামা।

ওবামা বলেন, যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানে শেষ করতে যান। যে কারণে হোয়াইট হাউসে বিদায় ভাষণ দেননি তিনি, দিয়েছেন শিকাগোতে। ট্রাম্পের সমর্থকসহ সব মার্কিনির উদ্দেশে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষবারের মতো শিকাগো গেলেন ওবামা। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টদের বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে ৪৪৫তম বারের মতো চড়লেন তিনি।

শিকাগো শহরকে নিজের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘এক সময়ে এই শহরের তরুণ ছেলেটি আজও নিজের অস্তিত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং আজও খুঁজে চলেছে জীবনের মানে।’ ওবামা বলেছেন, সংগ্রাম ও হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে জনগণের বিশ্বাস ও শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদার শক্তি প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি।

প্রায় ২০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় সম্মেলনকেন্দ্র ম্যাককরমিক প্লেস-এ মঙ্গলবার ভাষণ দেন ওবামা। ২০১২ সালের নির্বাচনে মিট রমনিকে পরাজিত করার পর এখানেই ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। ওবামার বিদায় ভাষণে উপস্থিত ছিলেন ফাস্র্ট লেডি মিশেল ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন।

ওবামার বিদায় ভাষণ অনুষ্ঠানের টিকিট বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনলাইনে একেকটি টিকিট ১ হাজার ডলারেও বিক্রি হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে হিলারি ক্লিনটন হেরে যাওয়ায় ভেঙে পড়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকদের উদ্দেশে প্রেরণদায়ক বক্তব্য দেন ওবামা।

প্রেসিডেন্টের বিদায় ভাষণ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তবে কোথায় বিদায় ভাষণ দেবেন, তা ঠিক করেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। ওবামার পূর্বসূরি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন হোয়াইট হাউসেই বিদায় ভাষণ দেন। কিন্তু জর্জ বুশ সিনিয়র তার বিদায় ভাষণ দেন ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও নর্স সেন্টার ফর পাবলিক রিসার্চের যৌথ জরিপে বলা হচ্ছে, বিদায় বেলায় ৫৬ শতাংশ মার্কিনির সমর্থন রয়েছে ওবামার প্রতি। বিল ক্লিনটন যখন বিদায় নেন, তখন তার প্রতিও প্রায় একইসংখ্যক মানুষের সমর্থন ছিল।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button