জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজশিক্ষা

বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় জাবির ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন

এবিএনএ : সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠী নিহতের পর বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১০ ছাত্রীসহ ৪২ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাভার থানা পুলিশ শিক্ষার্থীদের আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন জাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান রানা ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত।
এর প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। ছাত্রদের লাশ জানাজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে না এনে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারোপ করে আসছিল।
পরদিন শনিবার প্রথম থেকেই অবরোধ তুলে নিতে জাবি শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলেও তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতাহাতি হয়।
মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে দুপুর ১টায় ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ছুটে যান এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। ভিসি এ সময় তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে- নিহত দুই ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়ার কৈফিয়ত দেয়া, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া, নিহত আরাফাতের দুলাভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া, ঘাতক বাসটিকে চিহ্নিত করে চালককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশমাইল পর্যন্ত স্পিডব্রেকার ও গাড়ির গতিসীমা ৩০ কিমি বেঁধে দেয়া, জয় বাংলা গেটে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ এবং একাধিক পুলিশ বক্স স্থাপন।
দাবি পূরণে ভিসির আশ্বাসেও কাজ হচ্ছিল না। পরে বেলা ৩টায় ভিসি ফের অবরোধস্থলে ছুটে আসেন। তিনি অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানান এবং একই সঙ্গে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের অসদাচরণে ঘটনায় দায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তির দাবিতে অটল থাকলে ভিসি চলে যান। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকাল ৫টা থেকে মহাসড়কটি যান চলাচলের উপযোগী হয়।
পুলিশি অ্যাকশনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরে ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তারা বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ভাংচুর চালায়। এর মধ্যেই ভিসি সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।
সিন্ডিকেট সভা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকরা বেরিয়ে এলে পুলিশ ভিসির বাসভবনের ভেতরে থাকা ১০ ছাত্রীসহ আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি হল থেকে শিক্ষার্থীদের চলে যান। নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button