
এবিএনএ: ‘বিএনপি ভুয়া’ বলে স্লোগান দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবার রাজধানীর উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আমির কমপ্লেক্স এলাকায় আওয়ামী লীগ ঘোষিত গণসংযোগ কর্মসূচির শেষে দিনে যোগ দিয়ে তিনি এই স্লোগান দেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব যান ঘানা, তার নামে চিঠি এলো। আমি বলি এই চিঠি কি আকাশের ঠিকানায় এলো? জাতিসংঘের মহাসচিব কি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখলেন? পরে দেখা গেল মহাসচিব নাই। একজন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জানালেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের নামে এই চিঠি ভুয়া।’ এ সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভুয়া, ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা জাতিসংঘের মহাসচিবের নামে এ দেশের মানুষের কাছে মিথ্যাচার করে তারা ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র নিরাপদ?’ সবাই না না বলে স্লোগান দেন। দেশের মানুষ নিরাপদ? আইনের শাসন নিরাপদ?’ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, যত নালিশ, যত নাশকতার পরিকল্পনা করেন, যত সন্ত্রাস চালান কোনো কাজ হবে না। ক্ষমতা পরিবর্তন চায় বিএনপি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ক্ষমতার মঞ্চে পরিবর্তন চাইতে নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির খবর কী? আছে? অক্টোবর কবে হবে? আগস্ট মাসে বলে একমাসের কথা। সেপ্টেম্বর মাসে বলে এক মাসের কথা। সেপ্টেম্বর গেল, এখন বলে এক মাসের মধ্যে আন্দোলন হবে। দেশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে, বিশ্বাস করে মানুষ? বহুরূপী ব্যারিস্টারের কথা মানুষ কী বিশ্বাস করে?’ ‘বিএনপির এখন মূল ক্যাপিটাল হচ্ছে গুজব সন্ত্রাস। সাইবার অ্যাটাক বন্ধ করতে হবে স্লোগান দিলে হবে না। এই যে গুজব, আওয়ামী লীগ অফিসের নামে। এক মহিলাকে কালো কাপড় পরিয়ে মহিলা চিৎকার করে বলছে, ভিডিও পোস্টিংয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ অফিসে রেপ করা হচ্ছে, আমাকে বাঁচান। এই সকল অপকর্ম কে করেছে? ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চার মহিলা নাকি আটক। পরে আন্দোলনকারী ছেলেরা গিয়ে দেখলো হদিস নেই। মিথ্যা কথা প্রচার হচ্ছে, এই অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।’
কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখের আগে যেকোনো দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে। সেটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আপনারা প্রস্তুত হোন, অক্টোবর মাসে আমরা মনোনয়ন পর্ব শুরু করে দিয়েছি। অক্টোবর মাসে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন, নির্বাচনকালীন সরকার হবে না। সরকার যেটা আছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সরকারই থাকবে। তবে সরকার তখন রুটিন ওয়ার্ক করবে। সরকারের দায়িত্বে এরিয়া বদলে যাবে। মেজর দায়িত্ব থেকে সাধারণ দায়িত্ব, রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। হয়তো সাইজটা একটু ছোট হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে হতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খবর পেয়েছেন? আন্দোলন ১০ বছরে হয় নাই, ১০ মাসে হবে? ২০টা ঈদ চলে গেছে। ঈদ এলে বলে রোজার ঈদের পর, কোরবানির ঈদের পর। দেখতে দেখতে ২০টা ঈদ চলে গেল। আরেকটা ঈদ তো নাই, কাজেই ২০১৯ সালের প্রথম রোজার ঈদের পরে বিএনপি আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে পারে। তার আগে আর ঈদ নেই, আন্দোলনও হবে না। ঈদ সামনে না এলে তো তারা তারিখ দিতে পারে না। দেখতে দেখতে ১০ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? দেখতে দেখতে ১০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর?’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, ‘যারা দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করবেন, এবার বঙ্গবন্ধু কন্যা কাউকে ক্ষমা করবেন না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, শোডাউন করে যারা মনোনয়ন দাবি আদায় করবেন, নিজের পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দিয়ে দাবি আদায় করবেন-সেই ধারণা যারা করছেন, শোডাউনে কারো নমিনেশন হবে না। শোডাউনের নামে যারা বিশৃঙ্খলা করবে, তাদের নম্বর কাটা যাবে। কয়েকটা সংস্থা এখানে মনিটরে আছে, কারা কি করছে সব দেখছি। প্রার্থীদেরকে বলবো, সমর্থকদের থামান। না হলে কিন্তু আপনার নম্বর কাটা যাবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মীরা গত সাত দিন ২৫টি সমাবেশ করেছি এই নগরীতে। হাজার হাজার জনতার ঢল, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয় নাই। এটা একটা ভদ্র এলাকা, আমি ভেবেছিলাম উত্তরায় সুশৃঙ্খল একটা সভা হবে। আমি আবারও বলছি শেষ পযন্ত কর্মীদের প্রমাণ করতে হবে যে আমরা একটা সুশৃঙ্খল দল। এই ব্যানার, এই পোস্টার, এই সব বিলবোর্ড দেখে মনোনয়ন হবে না। মনোনয়ন হবে জনমতের ভিত্তিতে। শেখ হাসিনার কাছে সব প্রার্থীর আমলনামা জমা আছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সামনে আরও ২০/২৫ দিন সময় আছে। নম্বর যাদের ভালো আছে, ক্যাডারের জন্য নম্বর কিন্তু কমবে। যেই নেতা ক্যাডারের কথায় চলে ওই নেতার আমাদের দরকার নাই। মশারির মধ্যে মশারি চলবে না। ঘরের মধ্যে ঘর করলে চলবে না। ঠিকঠাক মতো চলেন, চাঁদাবাজদের, দখলদারদের প্রশ্রয় দিবেন না। চাঁদাবাজের জায়গা আওয়ামী লীগে নেই।’
‘আমি জনগণকে বলি, এখানে যারা অপকর্ম করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির অফিসে টেলিফোন করে নালিশ করবেন, আমরা বিচার করবো। রাজনীতি করি মানুষের জন্য, সেই নেতা যে মানুষকে ভালোবাসে। সেই নেতা যাকে মানুষ ভালোবাসে। এটা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, এটা শেখ হাসিনার রাজনীতি। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। তাফালিং করার পরিণতি ভালো নয়, তাফালিং ছাড়ো। ক্ষমতার দাপট দেখাবে না। ক্ষমতার অহংকার মানুষ পছন্দ করে না।’
Share this content: