এবিএনএ: বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত বছরের নভেম্বরে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক আশরাফুল আলম। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিল সুমু চৌধুরীর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর গোপীবাগে শুক্রবার রাতে ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায়ও নবী উল্লাহ নবীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করছে ডিবি পুলিশ। রিমান্ডে নেওয়ার পর তাকে এ ঘটনার বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার এজহার নামীয় আসামি নবীউল্লাহ নবী ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইপাড়গামী রাস্তার সড়কে বিজিবি মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর অবস্থান করে বেআইনি জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, বাঁশ-লাঠি ও ককটেল নিয়ে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সরকার বিরোধী উস্কানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দিতে থাকেন এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করেন। নবীউল্লাহ নবীসহ অপর আসামিরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে পার্কিং করা গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির দুটি বাসে অগ্নিসংযোগসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করেন। অগ্নিসংযোগে দুটি বাসের ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। আসামি নবীউল্লাহ নবীর (৬১) নির্দেশ ও হুকুমে পলাতক নেতাকর্মীরাসহ অজ্ঞাতনামা বিএনপির দুষ্কৃতিকারীরা নাম না জানা অনেকের প্ররোচনা, নির্দেশনা, একে অপরের যোগসাজশে এবং সহযোগিতায় বেআইনি জনতাবদ্ধ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সরকারবিরোধী উস্কানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধাসহ পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করেন।
বিশ্বস্ত গুপ্তচরের দেওয়া তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে নবীউল্লাহ নবীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আসামি নবীউল্লাহ নবী গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও ইন্ধনদাতা। গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সঠিক নাম ঠিকানা শনাক্ত করে গ্রেফতার, অর্থের জোগানদাতা ও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য আসামিকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে, আজ সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়।
গ্রেফতারের পর ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যুবদল নেতা কাজী মনসুর জবানবন্দির এক ভিডিওতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। কাজী মনসুর বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি একটি মিটিং হয়। মিটিংটি শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মিনিটের এই মিটিংয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ট্রেনে আগুন দেওয়ার জন্য। এর পরে শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে কাজী মনসুর ডিবিকে জানায়, তারা গতকাল একটি ভার্চুয়াল মিটিং করেন। মিটিং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নসহ আরও অনেকে ছিলেন। প্রায় ১৭ মিনিট ধরে মিটিংটি চলে। ভার্চুয়ালি এই মিটিং এ দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম সিদ্ধান্ত ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ করার জন্য, যাতে করে ভোটাররা ভয়ে সেখানে না আসে।
আর দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হয় ট্রেনে আগুন দেওয়ার। এ সময় মিটিংয়ে যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন জিজ্ঞাসা করেন ট্রেনে আগুন দিতে পারবে কে। তখন মিটিংয়ে উপস্থিত একজন রাজি হয় ট্রেনে আগুন দেওয়ার বিষয়ে।
এদিকে শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির হাইপ্রোফাইল নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে প্রথমে আসেন মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম। এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দপ্তর সম্পাদক ও কাজী মনসুর।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, যে মোবাইল থেকে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছিল সেই মোবাইলটি উদ্ধার করেছে ডিবি। মোবাইলটি কাজী মনসুরের। তিনি আমাদের কাছে গ্রেফতার আছেন। যারা এক সময় জেলখানায় দাগি আসামি হিসেবে পরিচিত ছিল তারা এই অগ্নিসংযোগ করে।