
এবিএনএ: আজ ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ‘জাগদল’ নামে আরেকটি দল গঠনের চেষ্টা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বিএনপি গঠিত হওয়ার পর জাগদল বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠার পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীণ থাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাণীতে বলা হয়, ‘জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এবারে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার দেশনেত্রীর মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ও সারা দেশে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালগুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় পবিত্র ফাতেহা পাঠ করবেন তারা।
এদিকে সারা দেশে মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা, পৌরসভা ও সকল ইউনিটে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান।
প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেন, যা পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপিতে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে দলটি প্রথমবারের মতো সংকটে পড়ে।
তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সাময়িক সময়ের জন্য সরকার ও দলের হাল ধরলেও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। বিচারপতি সাত্তারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিএনপি প্রকৃত অর্থেই অস্তিত্ব-সংকটের মুখে পড়ে। মওদুদ আহমদসহ বিএনপির অনেক নেতাই জেনারেল এরশাদের সরকারে যোগ দেন।
দলের সেই সংকটকালে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দলের কান্ডারির ভূমিকায় আছেন তিনি। দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে নিজে চেয়ারপারসন এবং ছেলে তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার পরে দলের পরবর্তী কান্ডারি হিসেবে তারেক রহমানকেই বিবেচনা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বর্তমানে খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীণ রয়েছেন। আর তারেক রহমান এক-এগারোর সরকারের সময়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে আর ফেরেননি। তার বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকটি মামলা বিচারধীন রয়েছে।
Share this content: