জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

জিয়ার মতো বেইমানের জন্ম বারবার হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

এবিএনএ: দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেই দায়িত্ব তরুণ সমাজকে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ব্যাপারে  প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সচেতন থাকতে হবে বলেও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই এখানে আমরা দেখি সেই মীর জাফর, মোস্তাক থেকে শুরু করে বেইমানের জন্ম বার বার হয়েছে। খুনী জিয়াউর রহমানের মতো বেইমানের জন্ম বারবার হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আর এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেই দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকে নিতে হবে।’

শনিবার ঢাকার খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিল- যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আর জাতির পিতা হত্যাকারী- যারা আত্মস্বীকৃত, একসময় গর্ব ভরে বলেছিল কে তাদের বিচার করবে? রশিদ ফারুকের কণ্ঠে বিবিসিতে তাদের এ ইন্টারভিউ আছে। সেই খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।’

‘যারা বাংলাদেশ চায় না, পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল, তাদেরকেই ফেরত নিয়ে আসা। গোলাম আজমকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, সে তো ফিরে এসেছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। নিয়ে আসলো জিয়াউর রহমান। আব্দুল আলিম, মাওলানা মান্নান থেকে শুরু শাহ আজিজ, যে শাহ আজিজকে পাকিস্তান প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিল যে এসব যুদ্ধ এগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী এসব বলার জন্য, ওকালতি করার জন্য। যদিও সেখানে খুব একটা পাত্তা পায়নি। কিন্তু গিয়েছিল। তাকে জিয়াউর রহমান বানালো প্রধানমন্ত্রী। যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি সে হলো প্রধানমন্ত্রী।’

তিনি বলেন, ‘সেই রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী, যারা এই বুদ্ধিজীবীদের ঘরে গিয়ে গিয়ে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করেছে তাদের বানালো মন্ত্রী। তারা মন্ত্রী হয়ে দেশকে ধ্বংস করেছে। তাদের হাত দিয়েই খালেদা জিয়ার ব্যবসা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা। তার ছেলেই সাজাপ্রাপ্ত। আর নিজে তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেই আছে।’

‘একটা দেশের মানুষের জন্য দরদ নাই। এই দেশটা যে এতো লাখো শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই বিষয়ে তাদের কোনও রকম কোনও সহানুভূতি ছিল না। তাদের ওই পাকিস্তানের প্রতি যে বহুল আনুগত্য, সেই আনুগত্যই তারা দেখিয়ে গেছে। তাদেরই তোষামোদী, চাটুকারিতা করে গেছে এবং তারা করে যাচ্ছে এখনও।’

একই পদাঙ্ক জাতীয় পার্টির এরশাদও অনুসরণ করেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ ক্ষমতায় এসে ফারুককে করেছে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দল করার সুযোগ দিয়েছে। খুনিরা বানিয়েছে ফ্রিডম পার্টি। অর্থাৎ খুন করার ফ্রিডম, সেই ফ্রিডম দিয়েছিল এরশাদ। আর খালেদা জিয়া এসে তো আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো, স্বামী যা করেছে তার থেকে আরও বেশি করলেন তিনি।

২১ বছর এদেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সেগুলোর সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীতে আমরা যখন সরকারে এলাম, তারপর শুরু হল অগ্নিসন্ত্রাসের তাণ্ডব। যার মধ্যে এতটুকুু মনুষ্যত্ব থাকে সে কি করে পারে জীবন্ত মানুুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করতে? এটাই নাকি খালেদা জিয়ার আন্দোলন ছিল! অর্থাৎ খুন, হত্যা ছাড়া এরা আর কিছুই জানে না। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের পেটোয়া বাহিনী বানিয়েছে। শুরু করল জিয়া, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করলো খালেদা জিয়া।’

‘এই দেশটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া- এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, এখন বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা তার সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই এই রক্ত কখনও বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না। আজ আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়ে গেছেন এদেশের জন্য। যাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে- তাদের নামটাও তো মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুছে ফেলতে পারেনি। কারণ আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, কখনোই বৃথা যায় নাই। সেটাই প্রমাণ হয়েছে এখন বাংলাদেশে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান হিসেবে অনুভূতি ব্যক্ত করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল মতিন খসরু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, আবু আহম্মেদ মান্নাফী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন যৌথভাবে সভা সঞ্চালনা করেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button