জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাগেরহাট রেল প্রকল্পে দূর্নীতি, দূর্নীতির বড়পুত্র সার্ভেয়ার রিয়াজ

এবিএনএ : নির্মাণাধীন খুলনা-মংলা রেলপথের জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের এল.এ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার মো. রিয়াজ উদ্দিন, প্রশান্ত চেইনম্যান আ. সালামের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত এ ব্যক্তিদের সীমাহীন দুর্নিতির সরণে এলাকাবাসী রিতিমত ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। দুর্নীতিবাজ এসব ব্যক্তিদের কারণে প্রকৃত জমি মালিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হছেন এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে রামপাল ও মংলা উপজেলার কয়েকটি এলাকা সরজমিন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকের উপস্থিতির খবরে ছুটে আসেন এলাকার শতাধিক মানুষ। এ সময় তারা সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব প্রাপ্ত সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিন স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে মোস্তাক, জাহাঙ্গীর, সাঈদ ও শেখর নামের দালাল চক্রকে কাজে লাগানো হয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, রেলপথ নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য নির্ধারণে গণর্পূত বিভাগকে কাজে লাগানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরাও নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারী হিসাব অনুযায়ী পাকা ও কাঁচা ঘরের জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও এক্ষেত্রে সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থাকা নানা প্রজাতির গাছের সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের পর ভাগ-বাটোয়ারা করে পকেটে পুরেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাস্তবায়নাধীন রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তৎসংলগ্ন কানেকটিং রোডসহ সোনাতুনিয়া, ধলদা, ঝনঝনিয়া, টেংরাখালী, বেলাই, হুড়কা, বাছাড়েরহুলা ও দ্বিগরাজ এলাকার বাসিন্দারা এসব অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারীরা জানান, রামপালের, হুড়কা মৌজায় জনৈক দিপক্ষর ম-লের নামে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও, তার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বা বসতঘর নেই। বড় নবাবপুর মৌজায় অজয় ম-লের বসতঘরটি অন্যের নামে দেখিয়ে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছে ঐ চক্রটি। ঝালবাড়িয়া মৌজায় ৬নং ওয়ার্ডে একই ঘর দুই ব্যক্তির নামে বরদ্দ দেখানো হয়েছে। এরা হলেন আঞ্জিরা বেগম ও হারুন অর রশিদ। একই মৌজায় জনৈক লোকমান আলীর নামে বসতবাড়ির ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে ঐ চক্রটি। সন্তোষপুর মৌজায় সাখাওয়াত উল্লাহর কাঁচা ঘর পাকা ইমারত উল্লেখ করে ২৮ লাখ টাকা উত্তোলনের পর ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ দালাল চক্রটি। কদমজি মৌজায় সৈয়দ আলী মিয়ার বাগানে ১৮ হাজার গাছ দেখিয়ে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘটনায় আপত্তি জানানো হলে সংশোধন করে ৪ হাজার ৩শটি গাছের অনুকূলে ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। টেংরামারী মৌজায় মো. রেজাউল করিমের নিজস্ব কোন বসতঘর নেই। তার নামে বসতঘর দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা সমান ভাগে ভাগ করে নেয় চক্রটি। হুড়কা মৌজায় আশিষ ম-লের নামে জমি দেখানো হলেও তার কোনো জমি নেই। ঝনঝনিয়া মৌজায় মাসুদ শেখের নামে বসতঘর দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো ঘর নেই। বাস্তবায়নাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়কে ১০৯ ফুট চওড়া এবং ৪.৫ কি. মি. লম্বা জমির ওপর ৪০ টি ঘর নির্মাণ হলেও দুর্নীতিবাজ চক্রটি ৩২২টি ঘর দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। ভূমি মালিকরা জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রতিটি চেকের অনুকূলে ১৫% হারে টাকা দিতে হচ্ছে রিয়াজ সাহেবকে। দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিরীহ মানুষদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে রামপাল এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি ক্ষোভের সাথে বলেন, সার্ভেয়ার রিয়াজ সাহেব তার দালাল চক্র নিয়ে গুরুতর অপরাধ কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান এল.এ কেস নং- ১/২০১৫-১৬, খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজে নিয়োজিত রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বাগেরহাটে যোগদানের পর অদ্যাবধি একই স্থানে বহাল তবিয়তে আছেন রিয়াজ উদ্দিন। নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঐ কর্মকর্তা বলেন, চাকরি জীবনে যতটুকু করতে পারিনি, সাত বছর বাগেরহাটে এসে তার দশগুণ ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন রিয়াজ। এক প্রশ্নের জবাবে ঐ কর্মকর্তা বলেন, সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত রিয়াজ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button