অর্থ বাণিজ্যলিড নিউজ

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে

এবিএনএ : বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের এক্সপোজার নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, সেই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলেই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক। বৃহস্পতিবার ডিএসই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের চলমান সংকট উত্তরণে আমাদের যে প্রস্তাব ছিল অর্থ মন্ত্রণালয় তা বিশেষ বিবেচনায় মেনে নিয়েছে। সেই সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলে কালকেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। আর প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে ১০ দিন দেরি করা হলে আমরা ১০ দিন সাফার করবো। তাই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না হয় আমরা তার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে চলমান সংকট উত্তরণে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকটি দাবি জানানো হচ্ছে। ব্যাংকের এক্সপোজার গণনা নিয়ে এবং আইসিবির এক্সপোজার গণনা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। এ সমস্যা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দাবি ছিল। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আমাদের প্রস্তাবগুলো বিশেষ বিবেচনায় মেনে নেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে তা বাস্তবায়ন করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভিত্তিতে গণনা করার নিয়ম বেধে দেয়। যার কারণে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহের ক্ষেত্রে অধিকতর সংকোচনমূলক হয়েছে। এমতাবস্থায় কোম্পানি আইনের ২৬ ক ধারা অনুসারে একক ভিত্তিতে এক্সপোজার গণনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যেসব দাবি অর্থ মন্ত্রণালয় মেনে নিয়েছে, সে বিষয়ে সাদেক বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন বন্ড ডিবেঞ্চার প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ার ও অতালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে ব্যাংকের এক্সপোজেরর হিসাবের বাইরে রাখা। কৌশলগত বিনিয়োগ যা পুরো মেয়াদকাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে এবং যেসব সিকিউরিটিজের লেনদেন হয় না। সেই সব সিকিউরিটিজকে এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়া। ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজার লিমিট গণনা করার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজার মূল্য অনুযায়ী গণনা না করে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা। ব্যাংক তার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারিকে প্রদত্ত ঋণের যে অংশ ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করে তা পুঁজিবাজারে এক্সপোজার হিসেবে না করে শুধু মাত্র ওই ঋণের যে অংশ পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটেজে বিনিয়োগ করা হয়, তাই ওই ব্যাংকে প্রকৃত পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গণনা করা।

এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে আইসিবির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই আইসিবিকে সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার হিসেবে গণনা করার বিষয় পুনবিবেচনা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বলেও জানান মোস্তাক আহমেদ সাদেক। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএমবিএ’র সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, ডিবিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি ড. জহির এবং বিএমবিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ প্রমুখ। বিএমবিএ’র সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে। আমানতের সুদ হার বেড়ে ১২ শতাংশ হয়ে গেছে। এডিআর নতুন করে নির্ধারণ করার কারণে পুঁজিবাজারে দেড়শ’ কোটি টাকা আসছে না। আমাদের প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়া হলে এই দেড়শ’ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে আসবে।

এর আগে ডিবিএ এবং বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছিল এডিআর’র সঙ্গে শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, সে সময় আমি বলেছিলাম সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। আর বিএমবিএ সভাপতি নাছির বলেন, যদি এমনটি আগে বলা হয়ে থাকে তাহলে আমরা ভুল বলেছিলাম।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button