জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাংলাদেশে সামরিক শক্তি ক্ষমতায় আসবে না : প্রধান বিচারপতি

এবিএনএ : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো সামরিক শক্তির ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। অনেক আগেই সেই সুযোগের কবর রচিত হয়েছে। সামরিক আইন যাতে আর ফিরে না আসতে পারে সেটি সংবিধানে সন্নিহিত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার ক্লাব সনমে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি নিউইয়র্ক। যুক্তরাষ্ট্রে আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সভাপতি মোর্শেদা জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সফরসঙ্গী বিচারপতি এম আর হোসেন, সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, সহকারী জজ আব্দুল তারেক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান, অল পার্লামেন্টিরিয়ান পার্টির সাধারণ সম্পাদক শিশির শীল, এটর্নি অশোক কর্মকার, এটর্নি মঈন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াহিদ, মিয়া মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার জীবনী পড়ে শোনান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদু রকিব মন্টু।
আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এতদিন বিচার বিভাগকে সরকারের অঙ্গ মনে করা হতো। এখন সেই ধারণা পাল্টেছে। তবে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ উল্লেখ করে এস কে সিনহা বলেন, বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ না থাকলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। বিচার বিভাগের অনিয়ম দূর করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আরেকটু সময় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, বাংলাদেশে কোন অন্যায় কাজ সুপ্রিম কোর্ট থাকতে হতে পারবে না। কোন ধরনের অন্যায় দেখলেই বিচার বিভাগ সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। এসময় প্রধান বিচারপতি কিছু সরকারি কর্মকর্তা এখনো দুর্নীতিগ্রস্থ আছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, বাংলাদেশের আদালতে মামলা জট আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আইনজীবীরাও এখন সকাল বিকাল দুই বেলায় তাদের মক্কেলদের সময় দিচ্ছেন। এস কে সিনহা বলেন, ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আদালতগুলোর কার্যক্রম ডিজিটাল করা হচ্ছে। পাশাপাশি আদালতে যে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল সেটা এখন মানুষ উপলব্ধি করেছে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার পর। তিনি প্রবাসীদের আইনি সহায়তার কথা উল্লেখ করে কোথাও বিচার বিলম্বিত হলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার অফিসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন অনেকেই অভিযোগ দিচ্ছেন এবং তিনি সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিচ্ছেন।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। আর মুসলিমদের সালামের অর্থ হচ্ছে শান্তি। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। যারা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাস করছে তাদের কোন ধর্ম এবং দেশ নেই। বর্তমানে সন্ত্রাসের শিকার বাংলাদেশও। তিনি কবি হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা এবং  সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি জেএমবি, হরকাতুল জেহাদের মত সন্ত্রাসী সংগঠনের সন্ত্রাস এবং শায়খ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে এবং বিচারের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসীদের শাস্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। যদিও আমাদের সংবিধানে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিতের কথা উল্লেখ আছে। এই সমান অধিকার নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমাদের দেশে আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তবে এ কথা সত্যি যে বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতি রয়েছে। সারা দেশে এখনো ৩ মিলিয়ন মামলা রয়েছে। আমরা ‘ব্যাক লকে’ পড়ে রয়েছি। যাকে বলে লেক অব সিস্টেম লস। আমি দায়িত্ব পাবার পর অনেক পরিবর্তন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থা, ভিডিও সিস্টেম। আগে এক সময় বিচারপতিরা শুধু সকালে কোর্টে যেতেন, বিকালে কোর্টে যেতেন না। আমি এখন সকাল এবং বিকাল উভয় সময়ে তাদের কোর্টে যাওয়া নিশ্চিত করেছি। তারা গরীব মানুষের অর্থে চাকরি করছেন, আর তাদের কোর্টে এসে হয়রানির শিকার হতে হবে, তা আমি চাই না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আমরা ডিজিটালাইজেশন করছি। রাশিয়ার বিচার বিভাগের সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলে সব কিছুই মানুষ জানতে পারবে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিচারালয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ৩০ একর জমির গাছ কেটে ইন্ডাস্ট্রি করতে চেয়েছিল।  কিন্তু বিচার বিভাগের মাধ্যমে আমরা তা বন্ধ করেছি। ট্যানারিকে সাভারে স্থানান্তরিত করতে আমরা কঠোর নীতি এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করেছি। প্রথম দিকে সবাই একটু গড়িমসি করলেও এখন সবাই সাভারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন আইন এবং আইনের প্রয়োগের কারণে বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে ফুল দিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিকে সম্মাননা তুলে দেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোর্শেদা জামান।

Share this content:

Back to top button