জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

এবিএনএ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, তোমরা আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। আজ আমরা সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। এই দেশের উন্নয়ন  ও সমৃদ্ধি দেখে একদিন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ২০১০ সালে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই টানেল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্দোলন করেছিলেন। আজ তাকে আমি স্মরণ করছি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর যুক্তি ছিল নদীতে একের পর এক সেতু করা হলে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি দেখে যেতে পারলে অনেক খুশি হতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সকল আন্দোলন-সংগ্রামে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সহযোগিতার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা যে কোনো দেশে ঋণ সহায়তা দেন সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও আন্তরিকতা দেখিয়ে তারা এই টানেল প্রকল্পে শতভাগ ঋণ সহায়তা দিয়েছে।’ মাত্র একরাতের আলোচনায় চীনের সঙ্গে টানেল নির্মাণের এমওইউ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই টানেলটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে চার লেন সড়কে আনোয়ারা উপজেলা যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হবে।’ টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যুক্ত করতে আনোয়ারা থেকে পটিয়া পর্যন্ত আরো অতিরিক্ত ১০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল খননকাজের উদ্বোধন শেষে এক সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান বন্দরনগরী। এর মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়।’ চট্টগ্রাম অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে যা যা করনীয় আমরা সবই করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ টানেলের খননকাজের উদ্বোধন করলাম, বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করলাম। এর মাধ্যমে নগরীর যানজট এড়িয়ে দ্রুততম সময়ে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করা যাবে। নগরীর যানজট মোকাবেলা করতে একাধিক বাইপাস সড়ক করে দিয়েছি। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করার চেষ্টা করব।’
পদ্মা সেতু নিজ নামে করার জন্য ওবায়দুল কাদেরের প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে কোনো অর্থ ছাড় করার পূর্বেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা দূর্নীতি প্রমান করতে পারেনি। আমাদের দেশের মানুষও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। একজন সুদখোর আর একজন এডিটর মিলে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা দুর্নীতি প্রমান করতে পারেনি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করার ঘোষণা দিয়েছি। এই পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এতোকিছু তখন আমি বলেছি পদ্মা সেতু থাকবে পদ্মা সেতু থাকবে।
আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আমি তো এক দিনেই সব হারিয়েছি। আমি দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। দেশের একজন মানুষও যেনো গৃহহীন না থাকে। শহর এবং গ্রামের মানুষ যেনো সমান নাগরিক সুবিধা পায় এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারি এতেই আমার সার্থকতা। দেশে দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে নামিয়ে ২১ ভাগে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশের জিডিপি এখন ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করে প্রধানমন্ত্রী টানা ৪০ মিনিট বক্তৃতা করেন। সুধী সমাবেশে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী তার বক্তৃতায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান। সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাস ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের বেসামারিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button