এবিএনএ: আমরা জানি যে বহির্মুখীরা কথা বলায় পটু এবং তারা পার্টি পরিবেশ বেশ পছন্দ করে। সাধারণত অন্তর্মুখী লোকদের তুলনায় এদের সামাজিক প্রভাব বেশি, কারণ তারা সহজেই যে কারো সঙ্গে মিশতে পারে এবং লোকজনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও বেশি। কিন্তু আপনি কি বহির্মুখী লোকের এই পাঁচ গোপন শক্তি সম্পর্কে জানেন?
* বহির্মুখীরা দ্রুত চিন্তা করে
এর কারণ এই নয় যে তারা অন্তর্মুখী লোকের তুলনায় বেশি স্মার্ট বা চালাক, এর কারণ হলো- তাদের মস্তিষ্ক অদ্ভুতভাবে ভিন্ন। বহির্মুখী লোকের ক্ষেত্রে স্টিমিউলাই বা উদ্দীপক (যেমন- কোনো নতুন অভিজ্ঞতা অথবা বসের কাছ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক প্রশ্ন) স্বাদ, স্পর্শ ও দৃষ্টিলব্ধ তথ্য প্রক্রিয়া করে এমন মস্তিষ্কের মধ্যবর্তী অংশসমূহের মধ্য দিয়ে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে। অন্তর্মুখী লোকের ক্ষেত্রে একই উদ্দীপক স্মৃতিশক্তি, পরিকল্পনা ও সমস্যা সমাধানের জন্য দায়ী ফ্রন্টাল লোবের গ্রে ম্যাটারের মধ্য দিয়ে অবশ্যই লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করে।
* বহির্মুখীরা সামাজিকতায় দক্ষ
নেটওয়ার্কিং বা সামাজিকতার কথা বললে অন্তর্মুখীরা পিছিয়ে যান, কারণ এ বিষয়টি তাদের স্বভাবের বিপরীতে। কিন্তু যেহেতু বহির্মুখীররা অন্যদের সঙ্গ পছন্দ করে, তাই তারা মানুষের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ তৈরি করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কার্ল জুংয়ের ব্যক্তিত্বের ধরন ভিত্তিক প্রাথমিক গবেষণার মূল ভিত্তি ছিল এ ধারণাটি- কিছু লোক দলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অনুভব করে। মস্তিষ্কের গবেষণা বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী লোকের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য নিরূপণের কয়েক দশক পূর্বে ১৯২১ সালে জুং লিখেন, ‘বহির্মুখী লোকেরা সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ায় প্রাণবন্ত হয়, কিন্তু একই পরিস্থিতিতে এর বিপরীতটা ঘটে অন্তর্মুখীদের ক্ষেত্রে।’
* বহির্মুখীরা ঝুঁকি নেয়
বহির্মুখীরা ঝুঁকি ও পুরস্কারের জীবন যাপন করে। এর পেছনে অবদান রাখে ডোপামিনের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা। ডোপামিন হলো একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম বা পুরস্কারতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্নায়ুবিদরা জুয়া খেলা ও জয়ের সময় বহির্মুখীদের মস্তিষ্কের ভেতরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন- তারা পেয়েছেন যে অ্যামিগডালা এবং নিউক্লিয়াস অ্যাকিউম্বেন্সে ডোপামিনের বৃদ্ধি ছিল। অ্যামিগডালা ও নিউক্লিয়াস অ্যাকিউম্বেন্স হলো মস্তিষ্কের দুটি অংশ যা বাহ্যিক উদ্দীপক দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়। ঝুঁকি নেওয়া যে সবসময় ভালো তা নয়, কিন্তু ঝুঁকি গ্রহণের সুবিধাও রয়েছে, বিশেষ করে ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে, বলেন অ্যাকাউন্ট প্ল্যানিং কোম্পানি টিএএস গ্রুপের সিইও ডোনাল ডালি। তিনি আরো বলেন, ‘ঝুঁকি না নেওয়ার অর্থ হলো পিছিয়ে থাকার বড় ঝুঁকিতে থেকে যাওয়া।’
* বহির্মুখীরা সুখী
সাধারণত বহির্মুখীদের আচার-আচরণে মনে হয় যে তারা অন্তর্মুখীদের তুলনায় সুখী এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্য। তাদের চোখেমুখে প্রাণবন্ত ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় গবেষকরা চীন, জাপান, ফিলিপাইন ও ভেনিজুয়েলার কলেজ ছাত্রদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে, যারা দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে বেশি বহির্মুখিতা প্রকাশ করেছিল তারা অন্তর্মুখী স্বভাবের ছাত্রদের তুলনায় বেশি সুখে ছিল। ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত কলেজ অব এডুকেশনের রিসার্চের সহযোগী ডিন, কাউন্সেলিং সাইকোলজির অধ্যাপক এবং গবেষণা লেখক টিমোথি চার্চ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় এটাই প্রথম উদঘাটিত হয়নি যে প্রতিদিনকার কার্যক্রমে অধিক বহির্মুখিতার প্রকাশ অধিক ইতিবাচক মেজাজের দিকে চালিত করতে পারে- পূর্বের অনেক গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু সম্ভবত আমরাই প্রথম বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকের মাঝে এ গবেষণা বিস্তৃত করেছি।’
* বহির্মুখীরা দ্বিতীয় ভাষা শেখায় পটু
এই দক্ষতাটি সামাজিক প্রজাপতি বা মিশুক প্রকৃতির লোক হিসেবে বহির্মুখীদের পরিচায়ক এবং তাদের ঝুঁকি গ্রহণের সহনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভারতের ভিআইটি ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, ঝুঁকি গ্রহণকারী যেসব লোক বিশ্বাস করত যে তারা সহজাতরূপে বহির্মুখী তাদের মধ্যে মাতৃভাষাকে সীমিত রেখে কোনো দ্বিতীয় ভাষায় দক্ষ হতে প্রচেষ্টা চালানোর প্রবণতা বেশি ছিল, এমনকি ভাষাটি দুর্বোধ্য হলেও।’