
এবিএনএ: গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পতনের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসের জয় বাংলা চত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে এ ষোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার বিকালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাই আপাতত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আল গালিব। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী কল্যান মিত্র, প্রিয়তা দে, রেহনুমা তাবাসসুম ঐশি, শরীফ আল রাজু, শিকদার মাহবুবসহ আরও অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। পাশাপাশি আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য গণমাধ্যম, গোপালগঞ্জের গোবরা ইউনিয়নবাসীসহ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানায়। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সকল দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবিচারের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছে। তারা আশা করে এভাবেই বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্দোলনে বিরোধীতাকারী গোষ্ঠী ও পদত্যাগী ভিসির দোসররা কোনভাবেই যেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর নাশকতা বা হামলার পরিকল্পনা করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পদত্যাগী ভিসির মাধ্যমে শিক্ষার এবং অবকাঠামোগত যে ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন হয়েছে সেসব পূরণের জন্য শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিক্ষার্থীরা আশা করে এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের একটি শীর্ষ বিদ্যাপীঠে পরিণত হবে।
এদিকে ভিসি নাসির পদত্যাগ করায় সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে গান বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে, একে অপরের মুখে রং মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। পরে শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে জয়বাংলা চত্বরে এসে শেষ হয়। শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন বলেন, আমরা আজ ১২ হাজার শিক্ষার্থী আনন্দে উদ্বেলিত। স্বৈরাচারী ভিসির পতনের মধ্যে দিয়ে আমরা মুক্তি পেয়েছি। এখন ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ ফিরে আসবে। রেহনুমা তাবাসসুম ঐশি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, টানা ১২ দিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। আমরা এখন মুক্তমনে পড়াশোনা করতে পারব। মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারব। কথায় কথায় আমাদের বহিষ্কার, নির্যাতন বন্ধ হবে। এখানে একজন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান ভিসি নিয়োগ দেয়া হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
শিক্ষার্থী প্রিয়তা দে বলেন, জাতির পিতার নামের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষায় মনোযোগ দিয়ে ভাল ফলাফল করে জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মসিউর রহমান বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আশা করি পূজার ছুটির পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। এখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেমর আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এনিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা অনিময়ন, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে এনে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করে। ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসির সমর্থকরা হামলা করলে ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার ভিসিকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের ১২ দিনের অনড় আন্দোলনের মুখে সোমবার বিকেলে ভিসি পদত্যাগ করেন। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
Share this content: