প্রাচীনকালে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ : ড. অনুপম সেন

এবিএনএ: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেছেন, প্রাচীনকালে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। তিনি বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক বার্নিয়ারের কথা উল্লেখ করে বলেন, বার্নিয়ার সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন। তিনি দু’বার বাংলাদেশে আসেন। তিনি এ দেশের বিস্তারিত বিবরণ তৎকালীন ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইয়ের প্রধানমন্ত্রী কোর্লবার্টকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন। একটি চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, প্রতি যুগে মিসরকেই বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ও ফলশালী দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু মিসরের এই সম্মান বস্তুত বাংলারই প্রাপ্য।
গত ৭ জানুয়ারি নগরীর জিইসি মোড়স্থ প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে এই ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের বরণ ও ২৭তম ব্যাচের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড. সেন আরও বলেন, ’১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলার পতন ঘটিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বাংলাদেশকে ইংল্যান্ডের কলোনিতে পরিণত করে। তারপর মাত্র তিন বছরের মধ্যে এই দেশের তৎকালীন ৫০০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে। এরপর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তারা ক্রমাগত বাংলাদেশকে শোষণ করেছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষ ইংরেজদের শোষণ থেকে মুক্ত হলেও নতুন করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা শোষিত হতে শুরু করে। প্রায় ২৩ বছর ধরে তাদের শোষণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের সল্ফ্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।’
ড. সেন ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে বলেন, ’বিশ্বের প্রথম সারির বৃহত্তম করপোরেশনগুলোর অধিকাংশের ভাষা ইংরেজি। তারা ইংরেজির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন। সাহিত্যে ইংরেজি ভাষার বিশাল অবদান রয়েছে। শেকসপিয়ার, শেলি, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস, বায়রন ও ইয়েটসের মতো কবি রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন নিউটনের মতো অসাধারণ বৈজ্ঞানিক, যাকে বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। সুতরাং ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শোষণে আমরা অত্যন্ত দীন হলেও, মননের জগতে তাদের দ্বারা আমরা সমৃদ্ধি পেয়েছি। ইংরেজি ভাষার ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি ভাষায় যে সম্পদ রয়েছে তার দ্বারা যখন নিজেদের জীবনকে আলোকিত করবে, তখন তারা যেন আমাদের দেশের দীন-দরিদ্র-বঞ্চিত মানুষগুলোকে না ভোলে। কারণ এই বঞ্চনায় ইংরেজদের একটা অবদান রয়েছে।’
২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকেরা আহমেদ ও মো. শাহেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম। আরও বক্তব্য রাখেন- সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, সুমিত চৌধুরী ও প্রভাষক শান্তনু দাশ। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
Share this content: