জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য ইসির প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

এবিএনএ: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে প্রতিটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে তাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দিন আহমদসহ রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি লোক প্রবাসে অবস্থান করে এবং তারা বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারেন তার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হলে প্রবাসীদের নাগরিকত্বসহ তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি সহজতর হবে। তাছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিও ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। প্রবাসে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর প্রায় ১২০টি দেশের প্রবাসী নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যাতে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায় সে বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় ভোটার দিবসের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭১ এর এ মাসেই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন, যা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। জাতি হিসেবে এর জন্য আমরা গর্বিত। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি যার যা কিছু ছিল তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বে অভ্যূদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
তিনি বলেন, ‘আমি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন সেইসব বীর শহীদদের। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় একজন ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় ভোটার দিবসের এ বছরের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ভোটার হব, ভোট দিব’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি তরুণদেরকে ভোটার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভোট দেওয়ার মানসিকতা তৈরিতে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহকে ব্যক্তির সঠিক তথ্য যাচাইকরণে ডেটাবেইজ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, এনআইডি ডেটাবেইজের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, পেনশন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও বিধবাসহ সকল ভাতাভোগীকে সহজে সেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে বিয়ে, জমির মালিকানা বদল, স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরিসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির অন্যতম প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে এনআইডি ডেটাবেইজ। নির্বাচন কমিশনকে এজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পরিচালনা করা এবং নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। বিভিন্ন কারণে যেসব নাগরিক এখনও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি তাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় ভোটার দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, সিভিল সোসাইটির সদস্য, মসজিদের ইমামসহ সমাজের গণ্যমান্য সকল ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও দুর্গম হাওর, চরাঞ্চল এবং পাহাড়ি অঞ্চলের নাগরিকগণের জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বায়োমেট্রিক ফিচারসমৃদ্ধ এনআইডি  ডেটাবেইজে সকল ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, নির্বাচন ব্যবস্থায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্তকরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ভোটার তালিকাভুক্তকরণের সাথে সাথে ভোটারদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে হবে। ভোটাররা যত বেশি সচেতন হবে নির্বাচনও ততো সুষ্ঠু হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ভোট। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই  সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে ভোটারদের। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় ভোটার দিবস পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তৃণমূল পর্যায়ে যথাযথভাবে পালন করা হলে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক সাড়া পড়বে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করব দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাহলেই দেশে দোষারোপের রাজনীতির পরিবর্তে শান্তি, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও পরমত সহিষ্ণুতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এগিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। ’ তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ সমগ্র জাতীয় জীবনে গুরুত্ববহ মার্চ মাসের ১ তারিখে জাতীয় ভোটার দিবস পালন নিঃসন্দেহে জনগণের জাতীয় সংহতি ও জাতীয়তাবোধের চেতনা জাগ্রত করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন সফল হোক।

Share this content:

Back to top button