এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি ব্যবস্থাপনায় সার্বজনীন বৈশ্বিক উদ্যোগের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দুষ্প্রাপ্য উত্স অন্তর্ভুক্ত করে ৭ দফা এজেন্ডা উত্থাপন করে বিশ্ব নেতাদেরকে তাদের দেশের পলিসিতে পানি সম্পর্কিত বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান।
সোমবার বুদাপেস্টে পানি সম্মেলন-২০১৬ উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পানি ব্যবস্থাপনায় এখনই একত্রে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা আন্তঃসীমান্ত পানি বণ্টনে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির সুব্যবস্থাপনা খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। এ প্রসঙ্গে তিনি ভাটির ব-দ্বীপ অঞ্চলীয় দেশের চিরায়ত জীবনযাত্রার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দুষ্প্রাপ্যতা সবসময় পানি সংকটের প্রধান কারণ নয়। বরং এ সমস্যা ন্যায্য বণ্টনের সঙ্গেও সম্পর্কিত। আন্তঃসীমান্ত প্রবাহের বণ্টন একটি জটিল বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীসহ ২৩০টি নদী বিধৌত দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের পানি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ দফা এজেন্ডা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা ও জীবনযাত্রার প্রধান অংশ জুড়ে আছে পানি।
বাংলাদেশে আমাদের সংস্কৃতি, চেতনা, জীবন ও জীবিকার প্রধান কেন্দ্র জুড়ে রয়েছে পানি- একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা পানি ইস্যুকে রাজনীতি ও কার্যক্রমে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সামনে শেখ হাসিনা তাঁর সাতটি এজেন্ডা তুলে ধরে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে পানি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্যানেল (এইচএলপিডব্লিউ) কর্তৃক গৃহীত লক্ষ্যসমূহ অর্জনে কার্যক্রম ভিত্তিক এই এজেন্ডা সহায়ক হতে পারে।
প্রথম এজেন্ডা হিসেবে তিনি বলেন, এজেন্ডা ২০৩০ -এ পানি এবং বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও বিনিময়ের গৃহীত নীতি অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোন উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পানি হবে অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দ্বিতীয় এজেন্ডা হলো, বিশ্বে পিছিয়ে থাকা লাখ লাখ মানুষ অথবা গ্রুপ যারা বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংকট মোকাবেলা করছে তাদের চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
তৃতীয় এজেন্ডা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখোমুখী দেশগুলোার বিপণ্ন এলাকায় পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় রোধে সহায়ক কাঠামো নির্মাণ জরুরি।
চতুর্থ এজেন্ডা হলো, অব্যাহত পানি সংকটের জন্য পানির ঘাটতি মূল কারণ নয়, তবে এখানে সমস্যা সুষম বণ্টনের জন্য আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির কার্যকর ব্যবস’াপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পঞ্চম এজেন্ডা হলো, কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকভাবে পানি ব্যবহার হচ্ছে। এজন্য সীমিত পানি ব্যবহার করে শস্য উত্পাদন করা যায়- এমন জাতের উন্নয়নে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
ষষ্ঠ এজেন্ডা হলো, আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আরো উন্নয়নে প্রতিটি দেশের মধ্যে একে অপরের ‘লাইট-হাউস-ইনিশিয়েটিভ’ বিনিময় প্রয়োজন। বিশেষ করে উন্নয়ন এবং পানিসম্পদের কার্যকর ব্যবস’াপনায় দক্ষতা ও কৌশল বিনিময় করতে হবে।
সপ্তম এজেন্ডা হলো, পানি সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে গবেষণা, উদ্ভাবনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে একটি বৈশ্বিক তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে এমডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে, যা ইতোমধ্যেই বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ঘাটতির অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘সাসটেইনেবল ওয়াটার সলিউশন এক্সপো’ পরিদর্শন করেন।