আইন ও আদালতলিড নিউজ

ধারের টাকা ফেরত না দিতে সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে খুন: র‌্যাব

এবিএনএ: বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শাহীদের কাছ থেকে ধার নেওয়া ১২ লাখ টাকা ফেরত না দিতে তাকে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জাকির হোসেন এ হত‌্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলী থেকে মো. জাকির হোসেন ও হত্যাকারী মো. সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, আনোয়ার শহীদ দিনাজপুর শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। দিনাজপুরে আনোয়ার শহীদ জমি কিনতে চান। ওই সময় জাকির দালাল হিসেবে মধ্যস্থতা করেন। এছাড়া, আনোয়ার শহীদের কাছ হতে বিভিন্ন সময়ে জাকির ১২ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। আনোয়ার শহীদের অবসর গ্রহণের পর ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দিতে তার সহযোগিতা চান। কিন্তু আনোয়ার শহীদ তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানান। বরং তার পাওনা ১২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য জাকিরকে চাপ দেন। এই টাকা ফেরত না দিতে তাকে হত‌্যার পরিকল্পনা করা হয়।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানান, তিনি এক সময় জাকিরের চালের গোডাউন কাজ করতেন। তিনি একজন মাদকসেবী এবং মাদকদ্রব‌্য কেনার জন্য তার প্রায় টাকা প্রয়োজন হতো। জাকিরের গোডাউনে কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে জাকির সাইফুলকে অর্থ সহায়তা করতেন। তিন থেকে চার মাস আগে জাকির সাইফুলকে ঢাকায় আসতে বললে তিনি আসেন। এসময় জাকির সাইফুলকে বলেন যে, একজন লোক আর্থিকভাবে তাকে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করেছে এবং তাকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল যদি ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে জাকির সাইফুলকে জায়গাসহ বাড়ি, অর্থ সহায়তা দেবে এবং আগের দেওয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে না। জাকির সাইফুলকে একটি ছুরিও কিনে দেন আনোয়ার শহীদকে হত্যা করার জন্য। জাকিরের প্ররোচনায় সাইফুল ইতিপূর্বেও আনোয়ার শহীদকে হত্যার চেষ্টা করে কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং পুলিশের উপস্থিতির  কারণে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর  সকালে জাকির ও সাইফুল দিনাজপুর থেকে ঢাকায় এসে কল্যাণপুরে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আনোয়ারকে ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যান সাইফুল। এসময় জাকির আনোয়ারের পাশে ছিলেন। আহত আনোয়ার মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পথচারীরা চারপাশে ঘিরে ধরে এবং এ সুযোগে জাকির ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।’

উল্লেখ‌্য, গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আদাবর থানা শ্যামলীর হলিল্যান্ড গলিতে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি ওই বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, আনোয়ার শাহীদ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। বাসা মিরপুর হলেও একজন ফোন করলে তিনি কল্যাণপুর যান। শ্যামলী হানিফ কাউন্টার পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button