এবিএনএ : বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের পণ্য বিক্রির স্লিপ (রশিদ) দেন না বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজার (পাইকারি ও খুচরা) সমিতির নেতাদের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ অভিযোগ করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
জবাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘স্লিপ ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি হবে না। এটা অনেক দিন আগেই সমাধান করা হয়েছে। তাহলে আপনারা স্লিপ ছাড়া নেন কেন? কোনো ব্যবসায়ী স্লিপ দেনে না, আপনারা সেটা আমাদের জানান। আপনি যদি স্লিপ না দেখাতে পারেন, তাহলে যে পণ্য কিনছেন, এটা তো স্পষ্ট যে, এখানে মেনুপুলেট (কারসাজি) করছেন। আপনারা যৌক্তিক লাভ করেন।’
অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ক্রয় ভাউচার থাকতেই হবে। ক্রয় ভাউচার না থাকা আইন অনুযায়ী বড় অপরাধ। রোজার ঈদ পর্যন্ত এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেবো না। ঢাকার মৌলভীবাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এ দুটি বাজার এবং যারা বড় ব্যবসায়ী আছেন, তারা যদি ঠিক থাকেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট পাওয়ার কথা নয়।’ মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘দোকানে টিসিবির পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, কেন? এটা আপনাদের (বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতা) দেখতে হবে। ঢাকায় শতাধিক মার্কেট। আমাদের পক্ষে সব দোকান পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আপনাদেরও সহায়তা করতে হবে। সব ব্যবসায়ী খারাপ নন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পরিবার আছে। তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। কিন্তু আমরা যখন গণহারে বলি সব ব্যবসায়ী খারাপ, তখন তাদের জন্য একটা বিব্রতকর অবস্থা হয়। সে কারণে আমরা আজকের এ আয়োজন করেছি। ওভার অল সুপার ভিশন করা হবে। এরপরও যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, কোনো ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বা বিভিন্নভাবে কারচুপি করছে, তাহলে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকবো।’ সভায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, সামনে রোজার মাস। এটা একটা প্যানিক (আতঙ্ক) সময় আমাদের। যার যতটুকু লাগে, তার থেকে বেশি ক্রয় করেন এবং বাসায় মজুত করেন। যদি এক বস্তা চাল না কিনে প্রতিদিনের চালটা কিনতাম, তাহলে ব্যবসায়ীদের মজুত করার যে টাকাটা লাগতো, সেটা ছাড় দিতাম।
তিনি বলেন, অভিযানে অতিউৎসাহী ডিবির লোক যান। কিছু অতিউৎসাহী পুলিশের লোক যান। শাহরিয়ার সাহেব জানেন, বিগত দিনে মৌলভিবাজারে কী রকম র্যাবের অভিযান চলেছে। কীভাবে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই। দোকান খোলার আগে সকাল ৮টায় র্যাব পাঠানো হয়। রাত ১০টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যান। আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। মৌলভীবাজারে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা রয়েছে। দেখা যায়, এক পণ্যের মার্কেটে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুরো মৌলভীবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘অভিযানের সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সামনে সাটার নামিয়ে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। আপনার যদি দুর্বলতা না থাকে, তাহলে কেন সাটার নামিয়ে দিচ্ছেন?’
সভায় কারওয়ান বাজার আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টিতে শাক-সবজির বারোটা বেজে গেছে। এ কারণে এবার শাক-সবজির দাম একটু বেশি। তাছাড়া পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা সচেতন নন। ক্রেতার যেটুকু প্রয়োজন, তার থেকে বেশি কেনেন। কেনাকাটায় সচেতন থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
উত্তরা ১৩ নম্বর জহুরা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মোশাররফ হোসের বুলু বলেন, পাইকারি বাজারে হুট-হাট করে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। প্রতিটি পণ্যের দাম ২০ শতাংশের উপরে বেড়ে গেছে। আমরা আড়তে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আপনার পোষালে নেন না পোষালে চলে যান। কোটি টাকা নিয়ে গেলেও ওরা আমাদের পাত্তা দেয় না। মিরপুর ৬ নম্বর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সাবান, হুইল পাউডার, দুধ সবকিছুর দাম লাগামহীন। কিন্তু আমরা শুধু চাল, তেল এ দু-তিনটা পণ্য নিয়ে পড়ে আছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্যের দাম বাড়ান না, বাড়ানো হয় ওপর থেকে।’