এবিএনএ : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা কী করে হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা ঠিকই বলেছেন, ২০ কোটি টাকা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। এত অস্বাভাবিক কেন হবে? যদি কোনো অনিয়ম হয় আমরা ব্যবস্থা নেব।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আরও চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। শিগগিরই এই নার্স নিয়োগ দেয়া হবে।
করোনা মোকাবিলায় আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও দুই হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা চার হাজার নার্স নিয়োগ দেব। সেই নির্দেশ আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে দিয়েছি। তাদের শিগগিরই নিয়োগ দেয়া হবে। সেই সাথে স্বাস্থ্য খাতে তিন হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট, সরঞ্জামাদি কেনাসহ চিকিৎসা সুবিধা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরও একটি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে করোনা মোকাবিলায় আমাদের সামর্থ্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বাস করি।
দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কম
সর্বশেষ গত ২৭ জুন বিশ্বের করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, এই সময়ে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচ লাখ এক হাজার ৬৪৪ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সেই তুলনায় আমাদের আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। এক হাজার ৭৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।
‘কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ভারতে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক শূন্য ৩, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশে আমরা করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও আমরা চাই না কেউ মৃত্যুবরণ করুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এই বাজেটে আমরা কর্মসংস্থানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ণ করা হয়েছে। জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। লক্ষ্য হবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করা।
‘বিগত ১২ বছরে ১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। আশা ছিল এবার আরও কমিয়ে ফেলব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০) দারিদ্র্য বিমোচনের ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে। এই মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় আমাদের দারিদ্র্যের সীমা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কেউ কেউ করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আমরা সুবিশাল যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছি তার মাধ্যমে এ আশঙ্কা অনেকটাই রোধ করতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি। আগামী অর্থবছর স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন শুরু হবে তখন আমরা দারিদ্র্য বিমোচন পূর্বের হারে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা গতানুগতিক বাজেট থেকে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন এনেছি। স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল প্রিপার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
কোডিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় পাঁচ হাজার পাঁচ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের দিক থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থান পঞ্চম। এটি গত অর্থবছর অষ্টম স্থানে ছিল।
Share this content: