
এবিএনএ : বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন শনিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটি বিশেষ প্রাধান্য পাবে। সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে আগত অর্ধশতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ ২৫ বছর পর ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের আয়োজন করছে। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে (সিএফএম) যোগ দিচ্ছেন। এবারের সিএফএম সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হল- ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ’। ওআইসির সদস্য সকল রাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ ছয় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার সিএফএম সম্মেলন উপলক্ষ্যে সাংবাদিকদের জানান, মুসলিম উম্মাহর শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বে উন্নয়নের লক্ষ্যে ওআইসি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় হুমকি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম রাষ্ট্রে বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, ‘ইসলামোফোবিয়া’ ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবারের সিএফএম সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা সিএফএম এ মূলত মুসলিম বিশ্বের সংঘাত ও চ্যালেঞ্জসমূহ, আন্তর্জাতিক ইস্যু, দেশে দেশে মুসলমানরা যে ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে কিভাবে সেগুলোর সমাধান, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিষয়সহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজে বের করা হবে।
সিএফএম-এ অংশগ্রহণকারী অর্ধশতাধিক মন্ত্রী, সহকারী মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শুক্রবার কক্সবাজারের কুতুপালং এ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন ও সরেজমিনে তাদের বাস্তব অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন।
পাশাপাশি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, আঞ্চলিক ত্রাণ কর্মকর্তা, জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও সশস্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনা করেন ও অবহিত হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে শুক্রবার কক্সবাজার যান। এছাড়া বিশেষভাবে আমন্ত্রিত কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ডও সিএফএম সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ও শুক্রবার কক্সবাজার সফর করেন।
শনিবার সকাল দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইম এ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ও ভাষণ দেবেন। সিএফএম এর বিদায়ী সভাপতি আইভরিকোস্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কেল এমন এতে সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে সিএফএম এর সভাপতির দায়িত্ব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ এ আল ওতাইমিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন। শনিবার দুপুর ও বিকেলে সিএফএম এর দুইটি কর্মঅধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় বিদেশি প্রতিনিধিরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন। রবিবার সকালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ কর্মঅধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিকেলে ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।
বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
সৌদিআরবের জেদ্দায় ওআইসির সদর দফতরের সহকারী মহাসচিবের (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) এশীয় গ্রুপের একটি পদের জন্য সিএফএম সম্মেলনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ এই পদে আগেই প্রার্থী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপাক্ষিক ও কনস্যুলার) রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে মনোনয়ন দিয়েছে। পাশাপাশি ওআইসির সদস্যভুক্ত আরেকটি দেশ কাজখস্তান এ পদে মনোনয়ন দিয়েছে। এশিয়ার ১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ জয়লাভে প্রয়োজনীয় ১০টি দেশের সমর্থন পাবে বলে আশাবাদী।
সিএফএম সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে সরকার। সম্মেলনস্থল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। অতিথিদের আবাসস্থল নগরীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে ও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় শুক্রবার ইত্তেফাককে বলেন, এ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সকল ডেলিগেট ও মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী শুক্রবার স্থানীয় একটি হোটেলে তাদের সম্মানে নৈশ ভোজের আয়োজন করেন।
Share this content: