
এবিএনএ: নাসতিয়া রিবকা রুশ একজন বিলিয়নিয়ারের সঙ্গে তার প্রমোদ তরীতে পার্টিতে যোগ দিতে মাত্র কয়েকটি দিন কাটিয়েছিলেন এবং তার এই হঠাৎ প্রাপ্তির বিষয়টি গর্ব করে পৃথিবীকে জানিয়েছিলেন। সেই ধনকুবের ব্যক্তি ছিলেন ওলেগ ডেরিপাসকা যিনি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন ক্ষমতাধর মিত্র। পরে এই মডেল দাবি করেন যে তার কাছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে রুশ হস্তক্ষেপের প্রমাণ মিলেছে তার হাতে। রিবকা একজন বেলারুশিয়ান মডেল এবং তার মূল নাম আনাসতাসিয়া ভাসুকেভিচ। থাইল্যান্ডের জেলখানায় প্রায় একবছর কারাবন্দী ছিলেন। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী দেরিপাসকা সম্পর্কে বিবিসিকে আনাসতাসিয়া বলেন, ‘আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। সে খুবই আকর্ষণীয় পুরুষ এবং তার দারুণ সুন্দর দুটি চোখ। সুতরাং কেন নয়?’ সে কেবল দেরিপাসাকার প্রমোদ তরীতে যেতে চেয়েছিলেন। ২০১৬ তার সেই চাওয়া পূর্ণ হয়। কিন্তু এ নিয়ে মুখ খোলায় দেরিপাসকার দুঃখ ছাড়া আর কিছু মেলেনি। গতবছর এই ধনকুবেরসহ অন্যান্য ধনকুবের বা শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কষাঘাত আসে। পরে দেখা যায় তার সঙ্গে পল ম্যানাফোর্টের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল আর পল ম্যানাফোর্ট ছিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারকার্যের সাবেক চেয়ারম্যান।
আনাসতাসিয়া বলেন, ‘অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে, আর আমার ধারণা আমিই সেসব সমস্যার শুরু করেছি, আমিই এর সূচনাকারী।’ তার অভিযোগ অস্বীকার করেন এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ করার দায়ে এই মডেল এবং তার তথাকথিত গুরু আলেকজান্দার কিরিলভের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
কিভাবে থাই কারাগারে বন্দী হলেন মডেল
একবছর আগে নাসতিয়া রিবকার বই এবং ছবি সহ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট এবং যেসমস্ত মানুষদের সঙ্গে প্রমোদ তরীতে তার দেখা হয় তাদের সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিতে থাকেন যা বিরোধী রাজনীতিক অ্যালেক্সেই নাভালনির দৃষ্টিগোচর হয়। সে নিজে প্রেসিডেন্ট অফিসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করেন।
অ্যালেক্সেই নাভালনি সংক্রান্ত একটি ভিডিও
ইন্টারনেটে পোস্ট করার পরপরই ডেপ্রিপাসকা প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অভিযোগ মামলা দায়ের করেন। আর রুশ পর্যবেক্ষক গ্রুপ সেই ভিডিওটি ব্লক করে দেয়। এরপর আনাসতাসিয়া এবং আলেকজান্দার কিরিলোভ থাইল্যান্ড যান ‘সেক্স ট্রেনিং’ নামে সেশনে অংশ নিতে। ২০১৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ এবং কাজের জন্য তারা দুজনই গ্রেপ্তার হন, পরে অবশ্য তা পরিবর্তন করে উপযাচক হয়ে যৌনসেবা প্রদান করার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
এফবিআইর কাছে কেন আবেদন করলেন রিবকা
গ্রেফতার হওয়ার পরপরই রিবকা ভেবেছিল আমেরিকানরা তাকে সাহায্য করতে পারে। একটি পুলিশ ভ্যানে করা ভিডিও মার্কিন গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে ইনস্টাগ্রামে ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। সে জানায় রাশিয়ান স্থাপনা, পল ম্যানাফোর্ট এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইন বিষয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। একসময় আমেরিকানদের কাছে সহায়তা চাইলেও এখন অদ্ভুতভাবে সে বলছে তাকে কারাবন্দী করার জন্য আমেরিকানরাই দায়ী। তার বক্তব্য, ‘আমেরিকানরা হয়ত ভয় পেয়েছিল যে তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আমি হয়তো কিছু জানি। এটা আমাদের উপযোগী খেলা নয়, এটা আমাদের চেয়েও বড়দের খেলা।’ সে তথ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু মার্কিন তদন্তকারীদের কোনোরকম তথ্য দেয়নি। তিনি বলেন, ‘এফবিআই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার কাছে ট্রাম্প, ম্যানাফোর্ট, ডেরিপাসকার জীবন সম্পর্কে জিনিসপত্র আছে। বহু মানুষ আসত এবং একই প্রশ্ন করত। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে কোন বিষয়টি আমার জন্য বিপদজনক। আমি সেগুলো ওলেগ ডেরিপাসকার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।’ তার কাছে আসলে কি জিনিস ছিল আর ডেরিপাসকা কখনো কিছু পেয়েছিলেন কিনা সেটা অবশ্য জানা যায়নি। চলতি বছরের ১৭ই জানুয়ারি সে এবং লেসলির সাজার স্থগিতাদেশ আসে এবং তাদের থাইল্যান্ড থেকে নির্বাসিত করা হয়।
রাশিয়া পৌঁছানোর পর তাদের আবার গ্রেপ্তার করা হয় যৌন ব্যবসায় লোকজনকে প্ররোচিত করার দায়ে। তার গ্রেপ্তারে ভিডিও তার আইনজীবী ইনস্টাগ্রামে ছেড়ে দেন। এখন তিনি ওলেগ ডেরিপাসকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। দুইদিন পর দুজনকেই রুশ হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হয়। আনাসতাসিয়া জানান তার কাছে কোন গোপন তথ্য আদৌ ছিলনা। তার মুক্তির জন্য কারো সঙ্গে কোন আপোষ রফার বিষয় তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়ায় ফেরার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেননি। তাদের সমস্ত বিপদ আপদের জন্য তারা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে দোষারোপ করছেন। নির্দোষ এক অবকাশ ভ্রমণ দুর্নীতি এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গল্পের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হয়েছে। তাহলে একবছর আগে নাসতিয়া কেন বলেছিলেন ওলেগ ডেরিসটামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ সরকারের ভূমিকায় জড়িত ছিলেন? এর উত্তরে তার সাফ জবাব ‘আমি এই প্রশ্নে উত্তর দিতে পারছিনা’।
Share this content: