আমেরিকা

ট্রাম্পকে ছেড়ে যাচ্ছেন যারা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছেড়ে যাচ্ছেন দলীয় অনেক নেতা। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়াছে এবং তাদের অনেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করছেন।

ট্রাম্পকে ছেড়ে যাওয়ার কাতারে মঙ্গলবার শামিল হয়েছেন প্রভাবশালী আরো কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা। তাদের সাফ কথা- প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য নন ট্রাম্প। তারা তাকে ভোট দেবেন না। অনেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হিলারিকে ভোট দেবেন তারা।

এ মুহূর্তে মহাসংকটে আছেন নিউ ইয়র্কের ধনকুবের ট্রাম্প। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার কী দশা হতে পারে- তা এখনো নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এ কথা এক বাক্যে বলা যায়, নির্বাচনী ময়দানে ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তিনি।

রিচার্ড হানা নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি। মঙ্গলবার তিনি সোজা ভাষায় বলে দিলেন, আমি হিলারিকে ভোট দেব।

ট্রাম্প সম্পর্কে রিচার্ড হানার ভাষ্য হলো- ‘তিনি জাতীয় অস্বস্তি।’ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর বিভিন্ন বিতর্কের কারণে অনেকে ট্রাম্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ ধারায় সবশেষ যোগ হলেন রিচার্ড হানা।

আরো অনেক রিপাবলিকান নেতা হয় ট্রাম্পের কাছ থেকে দূরে আছেন, না হয় তারা সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। একের পর এক এ ধরনের খবর আসছে। আর ট্রাম্পের পরিসর ছোট হয়ে যাচ্ছে। যদিও ভোটের হিসাবে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি কতটা কাজে আসবে, তা এখনই বলা মুশকিল।

নারী, নথিবহির্ভূত অভিবাসী ও মুসলিমদের নিয়ে ট্রাম্পের বিবৃতি ও নীতি অনেক রিপাবলিকান নেতাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

রিচার্ড হানা বলেছেন, কয়েক মাস ধরে ভাবছিলাম, আমি হিলারিকে ভোট দেব। কিন্তু সম্প্রতি খিজির খান ও গাজালা খান সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য আমাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।’ অর্থাৎ তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিচ্ছেন না।

ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইরাকে নিহত মার্কিন মুসলিম ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের বাবা খিজির খান ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া সম্পর্কে ট্রাম্পের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন খিজির খান।

ট্রাম্প এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান এবং খিজির খান ও তার স্ত্রী গাজালা খানকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো এখনো গরম রয়েছে এবং এর মাসুল দিতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। ডেমোক্র্যাট নেতারা তো অবশ্যই, এ নিয়ে ট্রাম্পের নিন্দা করছেন খোদ রিপাবলিকান নেতাদের অনেকেই।

বর্তমানে আরিজোনা রাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর ও ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ম্যাককেইন সোমবার রাতে ট্রাম্পের আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, এসব মন্তব্য (ট্রাম্পের মন্তব্য) রিপাবলিকান পার্টি, এর কর্মকর্তা অথবা প্রার্থীদের উপস্থাপন করে না।’

ফ্লোরিডার প্রাক্তন গভর্নর জেব বুশের শীর্ষ উপদেষ্টা স্যালি ব্রাডশ বলেছেন, ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিই তাকে রিপাবলিকান পার্টি ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে।

অনেক রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের বিরোধিতা করলেও তাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন, যারা হিলারিকেও ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেন অথাব মোটেও দেবেন না।

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা ও স্বাধীন বক্তারা কথা বলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- নিউ ইয়র্ক সিটির প্রাক্তন মেয়র মাইক ব্লমবার্গ। এ থেকে প্রমাণিত হয়, রিপাবলিকানদের মধ্যে হিলারি গ্রহণযোগ্য রয়েছে এবং তা আরো বাড়ছে।

যেসব রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না
বারবারা বুশ, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি
জেব বুশ, রিপাবলিকান পার্টি থেকে ২০১৬ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী
উইলিয়াম কোহেন, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী
জেফ ফ্লেক, আরিজোনার সিনেটর
লিন্ডসে গ্রাহাম, সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর, রিপাবলিকান পার্টি থেকে ২০১৬ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী
ল্যারি হগান, মেরিল্যান্ডের গভর্নর
মিট রমনি, ২০১২ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
জন কাসিচ, ওয়াইওর গভর্নর এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে ২০১৬ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী
মার্ক কির্ক, ইলিনয়ের সিনেটর
ইলেনা-রোজ, ফ্লোরিডার কংগ্রেস সদস্য
বেন সাসে, নেব্রাস্কার সিনেটর

যেসব রিপাবলিকান নেতা হিলারিকে ভোট দেবেন
রিচার্ড আর্মিটেজ, প্রাক্তন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হাঙ্ক পলসন, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী
ব্রেন্ট স্কাউক্র্যাফট, প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
রিচার্ড হানা, নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসম্যান

Share this content:

Related Articles

Back to top button