রাজশাহীতে দাবদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ছে, শঙ্কায় চাষিরা


এবিএনএ,রাজশাহী: রাজশাহীতে এবার বড় আকারের আমগাছে গুটির পরিমাণ কম হলেও ছোট গাছে তুলনামূলক ভালো গুটি দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদ ও দীর্ঘদিনের দাবদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ছে বাগানে বাগানে।
চৈত্র ও বৈশাখ মাসে রাজশাহীর বেশিরভাগ এলাকায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। যেসব এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, সেসব জায়গায় গুটি কিছুটা টিকলেও কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে চাষিদের।
এবার অনেক গাছে মুকুল কম এসেছে। আবার যেসব গাছে মুকুল এসেছে, সেসব গুটিও খরায় ঝরে পড়ছে। ফলে গাছে গুটি ধরে রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ পরিস্থিতিতে চাষিরা গুটির পরিচর্যায় দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তারা মনে করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এখনও আশানুরূপ ফলন এবং ভালো দাম পাওয়া সম্ভব।
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে খরার কারণে গুটি গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। এতে করে চাষি ও ব্যবসায়ীদের আশা-ভরসা ধাক্কা খাচ্ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কৃষি বিভাগ গাছে পানি সেচ ও স্প্রের পরামর্শ দিয়েছে। তবে ফল গবেষণা কেন্দ্র বলছে, শুধুমাত্র বৃষ্টির পানিই পারে গুটি ঝরা ঠেকাতে। তাদের মতে, অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে আমের বোটায় থাকা আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে, রসের অভাবে ঝরে পড়ছে গুটি।
রাজশাহীর বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, হরিয়ান, শ্যামপুর, পারিলা ইউনিয়নের বাগানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, গুটি ঝরার চিত্র স্পষ্ট। চাষিরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। কিন্তু প্রথম ধাক্কায় অনেক মুকুল ঝরে গেছে। পরে নতুন পাতার সঙ্গে কিছু গুটি এসেছে, যার পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ। এখন সেগুলো টিকিয়ে রাখাই সবচেয়ে কঠিন কাজ।
তাপপ্রবাহ যদি আরও বাড়ে এবং বৃষ্টি না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে কালবৈশাখীর বাড়তি শঙ্কা। তবুও চাষিরা আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। রপ্তানির প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাগিং কার্যক্রমও চলছে।
বাঘা উপজেলার আমচাষি শফিকুল ইসলাম ছানা জানান, গত বছর তিনি প্রায় এক কোটি টাকার আম বিক্রি করেন। এবার ৩০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন। চাষি বিপ্লব গত মৌসুমে ২২ লাখ টাকার আম বিক্রি করেন। তারা মনে করছেন, যতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকুক, ফলন ভালো হবে।
চাষি আবদুর রাজ্জাক জানান, তাঁর বাগানের ৯০০ গাছের মধ্যে ৫০০টিতে গুটি এসেছে। গুটি ধরে রাখতে তিনি দ্বিতীয় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার সরকার জানান, বর্তমান খরায় গুটির একটা অংশ ঝরে পড়লেও এখনই চূড়ান্ত ক্ষতির আশঙ্কা নেই। দ্রুত ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং পানি সেচের মাধ্যমে ক্ষতি কমানো সম্ভব।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন এর বিপরীত মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন আর কীটনাশক প্রয়োগের সময় নেই। খরা ও ঝড় মোকাবিলার মাধ্যমেই গাছ টিকে থাকতে হবে। তবুও তিনি মনে করেন, আমের উৎপাদন শেষ পর্যন্ত ভালোই হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা জানান, যেভাবে গুটি এসেছে, যদি কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে ফলন ভালো হবে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহীতে এবার ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন, যা গত বছরের সমান। দেশীয় বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
Share this:
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on Reddit (Opens in new window) Reddit
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp