
এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও একইভাবে জামিন পেয়ে তার দলের মার্কা ধানের শীষে ভোট চাইবেন বলে জানিয়েছেন মওদুদ আহমদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনজীবী নেতার আশা, তার নেত্রী রবিবারেই জামিনে মুক্তি পাবেন। জামিন পেলেই খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন থেমে যাবে না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে।’ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ নামের একটি সংগঠন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা পাওয়ার পর থেকেই কারাগারে বন্দী খালেদা জিয়া। তার আপিল আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। তবে জামিন আবেদন হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার। মওদুদ আশা করেন, আপিল আবেদনের মতো জামিন আবেদনও গ্রহণ করবে আদালত। তিনি বলেন, ‘জামিন পাওয়ার অধিকার তার আছে। তবে আমাদের বিচারের যে, নিয়মনীতি আছে, সেই নিয়মনীতিতেই রবিবারই বেগম জিয়ার জামিন মঞ্জুর হবে।’ ‘খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের জন্য আমরা ধৈর্য সহকারে রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করেছি। শেষ পর্যন্ত তারা (সরকার) দিতে বাধ্য হয়েছে। এরপরও সরকার নানা রকম কূটকৌশলে বিলম্ব করেছে।’ মওদুদ বলেন, ‘একদিনের বিলম্ব আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট আর সরকারের জন্য মাইনাস পয়েন্ট। খালেদা জিয়ার একদিন কারাগারে থাকা মানে, বিএনপির ১০ লাখ ভোট বাড়বে।’ গত ৩০ জানুয়ারি থেকেই আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীদে সমাবেশ করেই নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উপস্থিত জনতাকে ওয়াদা করান শেখ হাসিনা।মওদুদ জানান, এবার একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করবেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘আগামী রবিবার বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির পর কারোর আপত্তি না শুনে জনসভা করে ধানের শীষে ভোট চাইবেন। বিএনপি প্রমাণ করবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা যায়।’ ‘এক দল নির্বাচনের ভোট চাচ্ছে, আরেক দলের নেত্রী জেলে আছেন। তাকে অন্ধকার কারাগারে রেখে প্রধানমন্ত্রী ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কী অবস্থা। এটাই হচ্ছে, আজকে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।’ ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট চাওয়া বন্ধ করতো। নইলে আমাদেরও সভা-সমাবেশ, ভোট চাওয়ার সুযোগ দিত। নির্বাচন কমিশনার যদি মিছিল সমাবেশের সুযোগ না করে দেয় তাহলে বুঝব আগামী নিবার্চনের আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে তিনি কাজ করছেন।’ বিএনপি নির্বাচনের জন্য মাঠে নামলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন মওদুদ। বলেন, ‘কারণ মানুষই এ সরকারকে আর দেখতে চায় না। সরকার জানে তাদের জনপ্রিয়তা একবারেই নেই। আগামী নির্বাচনে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। এজন্য সরকার খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে, গুম-খুন করছে।’ রাজশাহীর সমাবেশে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন মওদুদ। বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সত্য শুনতে চাই। এদেশের তরুণরা তার মুখ থেকে সত্য শুনতে চায়। মিথ্যাচার শুনতে চায় না।’ ‘আপনি আমাদের সমালোচনা করুন। কিন্তু এমনভাবে বক্তব্য দেবেন না যেটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তরুণরা কী শিখছে, কী জানছে?’ আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ।
Share this content: