জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

জাবি শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ, ক্যাম্পাসে চলছে আন্দোলন

এবিএনএ: দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে এখনও উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন; তবে আবাসিক হল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে না দিলে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

এদিকে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে দুপুরে প্রভোস্ট কমিটির সভার পর বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ঘণ্টাখানেক পরও কোনও কোনও হলে অনেক শিক্ষার্থীকেই অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকেই বেরিয়ে যান, কেউ কেউ বের হচ্ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে প্রায় সব হলই খালি হয়ে যায়।

দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। তার অপসারণ দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে তাকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরতরা। মঙ্গলবার নিয়ে টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরে বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের নিদের্শ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে উপচার্যের পদত্যাগের দাবিতে রাতেও হলে অবস্থান করেন এবং আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। পরে বুধবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।

এরপর বুধবার দুপুরে আবাসিক হলের সব শিক্ষার্থীকে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রভোস্ট কমিটির সভার পর কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনকারী, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ কেউই হলে থাকতে পারবে না। প্রয়োজন হলে পুলিশ আবাসিক হলে গিয়ে তল্লাশি চালাবে। মঙ্গলবারের নির্দেশ না মানলেও বুধবারের নির্দেশনার পর হল ছেড়েন যান সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী হল ছেড়ে গেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করে ক্যাম্পাস ছেড়েছি। ক্যাম্পাস খোললে আমরা আবার আসব। তবে আমরা প্রশাসনকে তদন্তের বিষয়ে প্রশাসনকে যে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি তা না হলে আবার আমরা ক্যাম্পাসে আসব।’

সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মুরাদ চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করবো। উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন তা পূরণ হওয়া না পর্যন্ত আমরা থামবো না।

ক্যাম্পাসে অবস্থানের বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, আমরা চেষ্টা করবো নিজ নিজ হলে অবস্থান করার। তবে প্রশাসন যদি থাকতে না দেয় তবে আমরা রাতের মতো ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করবো এবং পরিদন আবার ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনে যোগ দিবো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দেড় শতাধিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পাশ্ববর্তী এলাকায় আরো দেড় শতাধিক পুলিশ রিজার্ভে রাখা হয়েছে। ওপর মহলের নির্দেশ মোতাবেক যে কোনো একশনে যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button