
এবিএনএ: জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন তিনি। একই দিনে নিউইয়র্কের প্যালেস হোটেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রায় এক সপ্তাহ নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্টেও অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার থেকে। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক বিতর্ক। এতে ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র, সরকার অথবা তাদের প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন। এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন।

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে রোহিঙ্গা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ প্রভৃতি ইস্যু প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেজসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডা ছাড়াও ওআইসি, আইসিজে প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীমো. শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি সফরসঙ্গী হবেন। এছাড়া ১৩৩জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ূ পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন, সকলের সুস্বাস্থ্য নিশিচতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ণ এবং অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বহুপাক্ষিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। সাধারণ বিতর্ক পর্বের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট তথা এসডিজি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সভা হবে। এছাড়া জাতিসংঘের এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে আলোচনা হবে বেশ কিছু ইভেন্টও। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৭২তম অধিবেশনে প্রদত্ত ৫ দফা ও ৭৩তম অধিবেশনে পুনর্ব্যক্ত ৩ দফা প্রস্তাব এখনো প্রাসঙ্গিক। উপরন্তু রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের আগ্রহ, সার্বিক অবস্থান অব্যাহত রাখা এবং প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিতকরণে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জোরালো বক্তব্য ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোমেন আরো বলেন, জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর নতুন করে সরকার গঠনের পর এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে অর্জিত বাংলাদেশের সাফল্যসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে পারেন। এছাড়াও এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের আয়োজনে ‘টেকসই সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ: মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রতিবন্ধীদের সমন্বিত বিস্তৃত প্রাথমিক যত্ন শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণে এই সভায় কমিউনিটি ক্লিনিক খাতে বাংলাদেশের অনুকরণীয় সাফল্য এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরা হবে। ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ও নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী উক্ত সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এছাড়া এই সাইড ইভেন্টের টেকনিক্যাল পর্যায়ের আলোচনা সভায় বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ‘শুভেচ্ছা দূত’ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন মডারেটরের দায়িত্ব পালন করবেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত।
এ সকল ইভেন্টের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেজ কর্তৃক সকল দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আয়োজিত অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করবেন।
প্রতি বছরের মত এবারও ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে একইদিন বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ফাস্ট সেক্রেটাররি (প্রেস) নূরএলাহী মিনার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মোহাম্মদ ও ইকোনমিক মিনিস্টার মনোয়ার হোসেন।
নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
Share this content: