
এবিএনএ : তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের মন জয় করেই নির্বাচনে জেতার প্রস্তুতি নিতে হবে। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি নয়, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই হবেন প্রকৃত নেতা।
তিনি বলেন, মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে কেউ আওয়ামী লীগের বদনাম করলে সে আর আওয়ামী লীগ করতে পারবে না। যাকে নৌকা মার্কা দেয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে। শনিবার দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্য, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার পাশাপাশি ত্যাগের মনোভাব নিয়ে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। জনগণ স্বতস্ফূর্ত হয়ে আপনাকে আপনার কাজে খুশি হয়ে ভোট দেবে। আমরা ভোট চুরির বদনাম নিতে চাই না। জনগণের মন জয় করেই নির্বাচনে জিততে হবে, ক্ষমতায় আসতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হবে এজন্য যে আমরা জনগণকে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত করে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ করছি সে লক্ষ্য পূরণ করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা- যা করেছি আমরাই, আমাদের প্রস্তাবে হয়েছে। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়, নির্বাচন নিয়ে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। তিনি বলেন, ৯৬ সালে বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘মাগুরা মার্কা’ নির্বাচন করেছে যেহেতু ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। যার কারণে আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। ভোট চুরির অপরাধে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে রাজনীতিটা হয়ে গিয়েছিল শো-অফ করার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা একদম প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত চলে গিয়েছি। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, এটা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য না। আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সে চিন্তা করাটাই একজন রাজনীতিকের জীবনের বড় সম্পদ। রাজনীতি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশ গড়ার জন্য। বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, যারা ক্ষমতার আশপাশে ছিল শুধু তাদেরই ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছে। দুর্নীতি করেছে। অত্যাচার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মানুষের ঘরে ঘরে উন্নয়ন পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। যার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জানতেন- ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করবে এবং পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, এ কারণে অনেক প্রস্তুতি প্রয়োজন। সে কারণে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে বসে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু সেসব বিষয় তখন মুখে বলেননি। তিনি অসহযোগ আন্দোলন ডাক দিয়ে স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি এবং বিশ্বজনমতের কারণে স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তুলে নেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানা গেছে, বিশ্বের কোনো দেশ থেকে কোনো মিত্রবাহিনী ফেরত যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনীকে ফেরত নেন। এটাও হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণে।
Share this content: