
এবিএনএ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি নাকচ করে তাদের পাঁচ বছর অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, পাঁচ বছর পর তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) যেকোনো পরামর্শ হয়ত ভেবে দেখবে নির্বাচন কমিশন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন এই বছরে সুষ্ঠু ভোট চেয়েছেন, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তবে এজন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। যখন নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে তখন হয়ত নির্বাচন কমিশন ওনার পরামর্শ বিবেচনায় আনবে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেই পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এই মুহূর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে কোনো লাভ হবে না। এটা নিয়ে দেশবাসী কোনো কথা শুনতে চায় না। উনি মাঝে মধ্যে যে হুঙ্কার দেন… উনি বয়সের কারণে ভুলে গেলেও জাতি জানে, উনি কোনোদিন নির্বাচন করে জয়ী হতে পারেননি। উনি একবারই সংসদে এসেছেলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে। বঙ্গবন্ধু আসন ছেড়ে দিয়ে তাকে সংসদে এনেছিলেন। যিনি কখনো জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেননি, তার এই ধরনের কাগুজে হুঙ্কারে জনগণ কিছু মনে করে না।’
বাকশালে আবেদন করেছিলেন জিয়াউর রহমান
বাকশাল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বাকশাল কোনো সংগঠন নয়। এটা একটা কনসেপ্ট। বাকশাল কর্মসূচি ভবিষ্যতে আসবে কি না- সে সম্পর্কে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি বা এই ধরনের কথা কেউ বলিনি। জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতি যদি একই প্লাটফর্মে থাকে, ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সব উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়ে সেই সময়ে তিনি এটা করছিলেন। সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তিনি এটা করেছিলেন।’
‘যে ফখরুল সাহেবরা বাকশালের বিরুদ্ধে বলছেন, ওনার নেতাও (জিয়াউর রহমান) বাকশালের নেতা হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। যদিও ওনার আরেক নেতা মিথ্যাচার করেছেন যে, তিনি আবেদন করেননি। তবে এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সভাপতিমণ্ডলীর সভায় যেসব সিদ্ধাস্ত হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক থাকবে না, দেশব্যাপী পালিত হবে।’
অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল উপলক্ষে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে আটটি সাংগঠনিক কমিটির খসড়া তালিকা করা হয়েছে বলেও জানান মাহবুব উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সভানেত্রীর নির্দেশে আটটি বিভাগে আটটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করার জন্য খসড়া তালিকা করা হয়েছে। এই টিমের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি বিভাগে তৃণমূল পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে সংগঠনকে গতিশীল করা এবং সংগঠনকে কাউন্সিল উপযোগী করে গড়ে তোলা। এই সভায় খসড়া তালিকা করা হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল ওয়ার্কিং কমিটির যে মিটিং হবে সেখানে সভানেত্রীর কাছে এই খসড়া তালিকা উপাস্থাপন করা হবে। এই টিমগুলো যাচাই-বাছাই সংযোজন-বিয়োজন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবেন।’
ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন করা হয়নি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে আসা অভিযোগের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছন্ন হওয়া এই দলের কিছু নেতা কোনো কারণ ছাড়াই সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও বিষোদগার করেছেন। তারা উদ্ধারকাজের কোনো খুঁত না পেয়ে এই সরকার ফায়ার ব্রিগেডের আধুনিকায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে বক্তব্য রেখেছেন। এটা একেবারেই মিথ্যচার বা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়। একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকে এই ধরনের মিথ্যাচার জাতি আশা করে নাই।’ এ সময় গত দশ বছরের ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
‘২০০৯ সালের সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতে এর সিকি ভাগ উন্নয়নও ছিল না। ২০০৯ সালে সারা দেশে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ছিল ২০৪টি, জনবল ছিল ৪ হাজার ৩৭৭। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০২টি স্টেশন এবং জনবল ১০ হাজার ৮৮০-তে উন্নীত করা হয়েছে। প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে আরো আধুনিক করার জন্য একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।’
চলমান উপজেলা নির্বাচনে সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করছেন তাদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ফেরামে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধারকাজে জীবন বাজি রেখে সেসব সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবির কাউসার, মারুফা আক্তার পপি, আনোয়ার হোসেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
Share this content: