এ বি এন এ : আজ ভোরবেলা থেকে গরু জবাই শুরু করেছেন মাংস বিক্রেতা মো. বিপ্লব মিয়া। শবে বরাতের কারণে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় তাঁর দোকানে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনটি গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবু অসংখ্য ক্রেতার ভিড়ে বিশ্রাম পাচ্ছেন না বলে জানান বিপ্লব। ঘামভেজা শরীরে মাংস কাটতে কাটতে বিপ্লব বলেন, ‘ভাই, চাইরট্টা গরুর মাংস বেচা হইছে। আজ বিকালের আগে আরও দুইড্যা গরুর জবু (জবাই) করমু। দাম সাড়ে চার শ টাকা।’
দোকানের সামনে দাঁড়ানো এক ক্রেতা বলেন, বিপ্লবের এই দোকানে গত শুক্রবার ৪২০ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘কী করমু! দুই দিন ধইর্যা গাবতলী হাটে লাইন দিসি। গরু কম, কসাই বেশি। ইন্ডিয়ান গরু তো নাই। এই লইগ্যা দামও বেশি।’
এ ছাড়া জিগাতলা, খিলগাঁও, খিলক্ষেত, ধূপখোলা এসব এলাকার মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে আজ প্রতি কেজি মাংস ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও ঢাকায় গরুর মাংস ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। অর্থাৎ, শবে বরাতের কারণে বিভিন্ন বাজারে মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মাংস বিক্রেতারা বলছেন, ৩৮ বছর ধরে রোজার আগে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে আসছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মাংসের মূল্য নির্ধারণ করেনি। এবারও এর কোনো লক্ষণ নেই। এই সুযোগটি গরু ও মাংস বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ মাংস বিক্রেতা সমিতির হিসাব অনুযায়ী, শবে বরাতের জন্য প্রতিটি গরুর দাম বেড়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। রাজধানী ঢাকায় তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত পাঁচ হাজার মাংসের দোকান রয়েছে। কিন্তু গরু কম সরবরাহ থাকার কারণে এখন আর সব দোকানে নিয়মিত মাংস বিক্রি হয় না। অনেক দোকান বন্ধও হয়ে গেছে। যে দোকানগুলো খোলা আছে, সেগুলো আজ চাহিদা রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার গরু। এ ছাড়া শবে বরাতের এই দিনে মৌসুমি বিক্রেতা ও চেইন শপগুলোতে গরুর মাংসের চাহিদা থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় আট হাজার গরু জবাই হবে আজ। সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশি ও ভারতীয় গরু মিলিয়ে কোরবানির ঈদ এ দেশে ২০ লাখ গরুর চাহিদা রয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ গরুর চাহিদা থাকে। কিন্তু ভারত থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে গরু কম আসছে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে গরুর প্রতি কেজি মাংসের মূল্য ছিল ২৮০ টাকা। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে এর দাম এখন ৪০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আজ ও গত কয়েক দিন বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) যশোর অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী, জেলার চারটি করিডর দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় আট হাজার গরুর বাংলাদেশে আসত। একই পরিমাণে ভারতীয় গরু সাতক্ষীরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ি কারণে গরু কম আসছে। যশোর সীমান্ত দিয়ে গরু আসা প্রায় তিন গুণ কমে গেছে। এখানে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৩ হাজার ৮৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২ হাজার ৩৩টি, মার্চে ৬০৬টি ও এপ্রিলে ১১ হাজার ৩টি গরুর শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
মাংস বিক্রেতা সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ভারত থেকে গরু কম আসছে, এটিও যেমন সত্য, তেমনি গরুর মাংসের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে, এটিও সত্য। ভারতীয় গরু কম এলেও দেশি গরু দিয়ে মাংসের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তাই বলে মাংসের দাম দ্বিগুণের বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এর পেছনে সরকারের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে দায়ী করেন তিনি।