
এবিএনএ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি, পণ্য বৈচিত্রকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচনসহ দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা-২০১৬ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে তিনদিন ব্যাপি এ মেলার আয়োজন করে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা এসএমই খাতের আওতাভুক্ত। এসএমই খাত দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্পকর্মসংস্থানে এ খাতের বিরাট অবদান রয়েছে। শিল্প কর্মসংস্থানের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সৃষ্টি হচ্ছে এ খাত থেকে। এসএমই খাত দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে।
টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেনারি শিল্পকে হাজারীবাগে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য যেসব কল-কারখানা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে আছে সেগুলোকে এক জায়গায় এনে সরকারি সহায়তা দেওয়ার চিন্তা ভাবনা সরকারের আছে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকা কল-কারখানা, কেমিক্যাল শিল্প, প্লাস্টিক ও মুদ্রণ শিল্পকে এক জায়গায় এনে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এসএমই খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে দক্ষতা বাড়াতে শিগগির জাতীয় এসএমই নীতিমালা ঘোষণা করা হবে। এ নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তা সংগঠনের কাছ থেকে সুপারিশ নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ নিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, দেশের ঋণখেলাপীরা সবাই বড় বড় ব্যবসায়ী। ছোট বা মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ খেলাপির তালিকায় নেই। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা কোন ঋণ পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের ব্যাংগুলোর অধিকাংশ টাকা ১০০ জন ব্যবসায়ীর কাছে আছে। এই টাকা ১৬ কোটি মানুষকে ব্যবহারের সুযোগ না দিলে দেশ এগিয়ে যাবে না।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ হালদার, জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চেম্বারের সহসভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, চেম্বার পরিচালক অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), অঞ্জন শেখর, এম এ মোতালেব, জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও অ্যালবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত, নির্বাহি পরিচালক মো.গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশিয় পণ্যের প্রদর্শন ও বিপণনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে আয়োজিত এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।
Share this content: