
এবিএনএ : জাতীয় সংসদে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব, মদ ও জুয়া নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। সংসদে শুধু সংসদের বিরোধী দলই নয়, সরকারি দলের এমপিরাও এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব বন্ধের দাবিও উঠেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কারা করল এসব ক্লাব? পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয় বলেও দাবি করেন তারা। এ ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এমপিরা একে-অপরকে দোষারোপ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) চিত্রনায়িকা পরীমনির ঘটনার সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা শুরু করেন। পরে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের এমপিরা অংশ নেন। এ সময় মদের অনুমোদন নিয়ে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করা হয়। এর প্রেক্ষাপটে আলোচনায় কিছুক্ষণের জন্য সংসদ সরব হয় ওঠে।
চুন্নু আলোচনার শুরুতে বলেন, কয়েক দিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হন? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হন? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি না।
রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবের নাম উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হন? এত টাকা কোথা থেকে আসে?
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন- কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হন? পরীমনির যে ঘটনা সেটা বোট ক্লাবে। ওই জায়গার একজন মালিক আছেন। তিনি যেতেও পারেন না। এসব দেখতে হবে।
বিএনপির হারুনুর রশীদ এ সময় স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর নিয়ে বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোনো মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।
তিনি বলেন, এসব ক্লাবে, মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নন, তিনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক।
হারুনের বক্তব্যের পর শেখ সেলিম আবারও ফ্লোর নেন। তিনি বলেন, লাকী খানের ঝাঁকি নাচের কথা কী ভুলে গেলেন? হিযবুল বাহার। জিয়াউর রহমান ওগুলো করেছিলেন। সরকার কোনো মুসলমানকে মদের পারমিশন দেয়নি। বন্ধ করতে গেলেই আপনারাই (বিএনপি) চিল্লাচিল্লি করবেন। বলবেন, ফরেনারদের পারমিশন লাগবে।
তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, হারুন সাহেবের সদস্যপদ আজই ছেড়ে দেয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।
পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ করে এটা করা হয়েছে। বিদেশিদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।
বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করার দাবি জানান। পরীমনির মামলায় আটক জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিষয়ে রাঙ্গা বলেন, পরীমনি অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার হবে। দোষী হলে শাস্তি হবে।
Share this content: