আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

কোন দিকে যাচ্ছে মালদ্বীপের রাজনৈতিক ভবিষ্যত?

এবিএনএ : মালদ্বীপে উদ্ভুত রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে। জরুরি অবস্থা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধরপাকড় শুরু হওয়ায় দেশটির রাজনীতির ভবিষ্যত কোন দিকে যাচ্ছে, সেটি এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।সম্প্রতি রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে আদেশ দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের পর অভিশংসিত ও গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় গতকাল সোমবার দেশটিতে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন।

মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল্লা সাইদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের আগে রাত থেকে সুপ্রিম কোর্ট ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এতে করে আদালতে থাকা বিচারপতিরা আটকা পড়েছেন। এর আগে গতকাল সোমবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকে। এ সময় তার জামাতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির আদেশের পাশাপাশি দেশটির আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে করা চলমান একটি মামলাকেও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রেসিডেন্ট নাশিদ বর্তমানে নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন।মোহাম্মদ নাশিদ মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে বলেন, সরকারের পদক্ষেপ ছিল ‘নির্লজ্জভাবে অবৈধ’। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।এদিকে, সোমবার গ্রেপ্তার দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের সৎভাই। গাইয়ুম দেশটির প্রধান বিরোধী দলের সমর্থক এবং প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের পতন ঘটানোর আন্দোলনে তার সমর্থন ছিল বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।গত বছর বরখাস্ত হওয়া বিরোধীদের দলের ১২ সংসদ সদস্যকেও পুনর্বহাল করেন আদালত। এ কারণে অভিশংসনের শঙ্কায় পড়েন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। শঙ্কার মুখে তিনি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে অনাগ্রহ দেখালে রোববার বিরোধী দলগুলোর সর্বাত্মক জোট সংসদে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। পদত্যাগ করেন সংসদ সচিবালয়ের মহাসচিব। এর পরই সেনাবাহিনী সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলে। পরে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন।ওই সময় দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল বলেন, প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ বা তাকে অভিশংসন করতে আদালত রুল জারি করতে পারেন। সত্যিই যদি এমনটা হয়, তবে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোটেও ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেন তিনি।এদিকে, মালদ্বীপে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক সেক্রেটারি বরিস জনসন। এ ছাড়া মালদ্বীপের উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এটা অস্থিরতা এবং হতাশাজনক।যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এক টুইট বার্তায় বলেছে, মালদ্বীপের মানুষের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মালদ্বীপ সরকার ও সেনাবাহিনীকে অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিষয়টিও তাদের মাথায় রাখতে হবে। কারণ মালদ্বীপে কি ঘটছে, সেদিকে গোটা বিশ্ব নজর রাখছে।উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আহ্বানে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন সাড়া দেবেন কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারির বিষয়টিও যদি তিনি আমলে না নেন, তাহলে মালদ্বীপের রাজনৈতিক সংকট আরও ঘণীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটির পুলিশ আদালতের নির্দেশনা মানতে ব্যর্থতা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কারাগারে অথবা নির্বাসনে পাঠিয়েছেন।২০১৩ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাশিদকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। তবে নাশিদের সমর্থকদের দাবি, ওই নির্বাচনে জালিয়াতি করা হয়েছে। ইয়ামিন ক্ষমতায় বসার পর থেকেই দেশটিতে মানুষের বাক-স্বাধীনতা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button