
এবিএনএ : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ফাঁসাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী। হামলার দুই দিন পর মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব। গত রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই ছাত্র নিহতের গুজব ছড়িয়ে গভীর রাতে হামলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনে। হামলাকারীরা দুটি গাড়িতে আগুন দেয়ার পাশাপাশি ভবনের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর করে, লুট করে প্রত্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন।
মঙ্গলবার সকালে বাসভবন পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নাম বলতে চাননি তিনি। রিজভী বলেন, ‘গুলি, হামলা, ভাঙচুরতো করেছে ছাত্রলীগ। গণমাধ্যমে সেসব খবর বেরিয়েছে, ছবি প্রকাশ হয়েছে তাদের ধরছেন না কেন?’ ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরাতো জানিয়ে দিয়েছে ভিসির বাসভবনে তারা হামলা করেনি। ঢাবির ক্যাম্পাস তো ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দখলে ছিল। ঢাবি ক্যাম্পাসে এ মুহূর্তে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছাড়া আর কেউ হামলা, ভাঙচুর করার সাহস রাখে কি?’ ঘটনার রাতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘এ হামলা পরিকল্পিত। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাম্পাসে প্রবেশের ১০ মিনিটের মাথায় এই হামলা সংঘটিত হলো। এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্বেও ভিসির বাসভবনে দুই ঘন্টাব্যাপী হামলা রহস্যজনক।’ ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ভিন্নখাতে নিতেই সরকারি এজেন্টদের দিয়ে ভিসির বাসভবনে হামলা হয়েছে কি না এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।’ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের আলোচনাকে ‘লোক দেখানো তামাশাও’ বলেও আখ্যা দেন বিএনপি নেতা।
‘তামাশা এজন্য যে, আলোচনায় বসার পরেও হুমকি দেয়া হচ্ছে ফুটেজ ধরে বেছে বেছে গ্রেপ্তার করার জন্য। অর্থাৎ এটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য। শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের দাবি হলো, তারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি চায়, মেধার মুল্যায়ন চায়। তাদের ওপর এমন নিষ্ঠুর আচরণ কেন?’
আগেই বলেছিলাম চাপাবাজি
চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড ৭.৬৫ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছে পরিসংখ্যার ব্যুরো। তবে বরাবর রক্ষণশীল হিসাব দেয়া বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, এটা হবে ৬.৫ থেকে ৬.৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবকে মনে ধরেছে রিজভীর। বলেন, ‘সরকারের জিডিপি বৃদ্ধির ঘোষণা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার সেটি আন্তর্জাতিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ ‘আমরা এর আগে বলেছিলাম-জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের ঘোষনা চাপাবাজি। গতকাল বিশব্যাংক বলেছে- জিডিপি ৬.৫ ভাগের বেশি হবে না।’
সৎ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে বলায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা
দেশে সৎ লোকের সংখ্যা বাড়ছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে মন্তব্য করেছেন তাকে মশকরা বলেছেন রিজভী। বিএনপি নেতা বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের দেশ পরিচালনার সাবজেক্ট জনগণ নয়, তাদের সাবজেক্ট জনগণের সাথে মশকরা করা।’ ‘দুর্নীতির মহাযজ্ঞে হাইওয়ে খুলে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। দুর্নীতির টাকা পাচার করছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক রুই-কাতলা। বিদেশে সেই টাকায় পালিত হচ্ছে তাদের পরিবার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পালাচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী, নিরাপদ আশ্রয়ে থাকছেন বিদেশে। সবচেয়ে বৃহত্তম আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে এই অর্থমন্ত্রীর আমলে। রাজকোষ থেকে উধাও হয়ে গেছে আটশো কোটি টাকা।’
‘আওয়ামী নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত গচ্ছিত সম্পদের ওপর এখন গড়াগড়ি খাচ্ছেন। অথচ এসব বিষয়ে নীরব অর্থমন্ত্রী নিজেদের সরকারকে সৎ মানুষ উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বলে মনে করছেন।’
Share this content: