
এবিএনএ : বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ডিভিশনের সবধরনের সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে কারগার যে আরাম-আয়েশের জায়গা না, সেটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থে যেটা ডিভিশন বলে সেটা দেয়ার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে হয়তবা। কিন্তু এখন যে মর্যাদায় উনি আছেন তার জন্য যেভাবে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং তার খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, আমার মনে হয় এসব বিষয়ে ভিশনপ্রাপ্ত প্রিজনাররা যেভাবে সুযোগ পান তা তিনি পাচ্ছেন।’ ‘আমার জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তিনি মর্যাদা, গুরুত্ব এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেটা পাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি যা চাচ্ছেন সেটা তাকে দেওয়া হচ্ছে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘ডিভিশনের ব্যাপারটা যদি বলা যাচ্ছে না এটাও আদালতের রায়ের সাথে থাকার কথা।’ ‘কেন দেয়া হয়নি ঠিক জানি না, নিশ্চয়ই আদালত এটা দেয়ার জন্য বলবে। ডিভিশনের চেয়ে তিনি খারাপ অবস্থায় নেই। আর ডিভিশন পেলে এর চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন আমার সেটা মনে হয় না। এটা তার স্ট্যাটাস টা দেখেই তাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।’ তবে কারাগারে মুক্ত জীবনের সুবিধা যে পাওয়া যায় না, সেটাও জানিয়েছেন সড়ক মন্ত্রী। বলেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে, জেলখানা আরামের জায়গা নয়। সব সুবিধা তো এখানে পাওয়া যাবে না। তবে একটা মানুষ থাকতে হলে যা কিছু প্রয়োজন তা তাকে (খালেদা জিয়া) দেয়া হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর তাকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। সেখানে দুটি কক্ষ আগে থেকেই তৈরি করে রাখা হয়। শনিবার বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। পরদিন আদালতে এ বিষয়ে একটি আবেদনের পর ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। তবে খালেদা জিয়া কারাগারে ডিভিশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছেন। তাকে অ্যাটাচ বাথরুমসহ কক্ষ দেয়া হয়েছে, আছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, পত্রিকা, টেলিভিশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে তার জন্য। কারাগারে ডিস সংযোগ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বসানের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার মর্যাদা যে অনেক ওপরে-সেটির কথাও উল্লেখ করেন সড়ক মন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশ একটা বড় দলের চেয়ারপারসন, তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাদের অসম্মান মর্যাদা বা তার সুযোগ সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা সেটা হচ্ছে না। রবিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়েরর সভাকক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ওবায়দুল কাদের। কারাগারে খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত সহকারী নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, এই ধরনের সুবিধা এর আগে কেউ পাননি। ‘ওয়ান ইলেভেনের পর যখন দুই নেত্রীকে মাইনাস করার করার পরিকল্পনা নিয়ে জেলে রাখা হয়েছিল তখন কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত সাহায্যকারী দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার জন্যও তখন কোন ব্যক্তিগত সাহায্যকারী দেয়া হয়নি।’
খালেদা জিয়ার সাথে ব্যক্তিগত সাহায্যকারী রাখার বিষয়ে আদালত অনুমতি দিলেও তাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন ছিল কাদেরের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তবে ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু. মওলানা ভাসানীকে কখনও কাগারারে ব্যক্তিগত সাহায্যকারী নিতে দেখিনি। এটার সুযোগ নেই।’ বিএনপি প্রধানকে পরিত্যক্ত ভবনে রাখার বিষয়ে দলের নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘এই জেলখানা পরিত্যক্ত হয়েছে মাত্র কয়েক মাস আগে। আর তার থাকার জন্য যে রুমটি নির্ধারণ করা হয়েছে তা ভালোভাবে বার্নিশ করা হয়েছে।’ ‘আমি যতটুকু জানি বেগম জিয়ার জন্য এখন একটা রুম মেরামত করে রাখা হয়েছে। যেটি আগে জেল সুপারের রুম ছিল।’ খালেদা জিয়ার জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দী থাকার সময় দেখেছেন জানিয়ে কাদের বলেন, ‘ওই রুমে আমি এবং তারেক রহমান কোর্টে যাওয়ার আগে একসাথে বসার সুযোগ হয়েছিল। সে রুমটাকে ডেকোরেটেড করে বেগম জিয়াকে রাখা হয়েছে।’
এই মামলায় পলাতক তিন আসামি তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানসহ তিনজনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না এমন প্রশ্নও ছিল কাদেরের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। তবে চেষ্টা চলছে। ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সময়মত নেয়া হবে অলরেডি এ বিষয়ে আমার জানামতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা শুরু করেছেন।’ ‘এটা তো একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার, হঠাৎ করে চাইলেই সম্ভব নয় ফিরিয়ে আনা।’
Share this content: