
এবিএনএ: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বিদেশে নিতে চাইলে এখনই তার উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী প্রসাদ শেঠী। তবে তিনি এও বলেছেন, এখন বাংলাদেশে যে চিকিৎসা চলছে তার চেয়ে বেশি ইউরোপ-আমেরিকাতেও সম্ভব নয়। দেশে ভিজিটরের চাপ কিংবা অবস্থা অবনতির বিষয়টি মাথায় রেখে তাকে এখনই বিদেশ পাঠানো যেতে পারে।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকদের এ কথা জানান দেবী শেঠী। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া। ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বিএসএমএমইউতে পৌঁছান দেবী শেঠী। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন তাকে স্বাগত জানান এবং ওবায়দুল কাদেরেরর কাছে নিয়ে যান। এর আগে বিমানে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকায় আসেন ডা. শেঠী। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডা. শেঠীকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দর থেকে তিনি হোটেল সোনারগাঁয়ে আসেন। সেখান থেকে পরে তিনি বিএসএমএমইউতে যান।
রোববার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে আসা চিকিৎসক দল এখনও বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন পুষ্টিবিদ একজন নার্স ও একজন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। রোববার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, তিনি পা নাড়াতে পারছেন। ডাকলে চোখও খুলছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার এখনও কোনো উন্নতি হয়নি। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে দেখতে রোববার হাসপাতালে যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। হাসপাতাল চত্বরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকেও তার অবস্থা জানতে ভিড় করতে দেখা যায়।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ৬৭ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের রোববার ভোরে রাজধানীর সংসদ ভবন সংলগ্ন তার সরকারি বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফজরের নামাজের পর হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সকাল সাড়ে ৭টায় হাসপাতালের ডি-ব্লকের কার্ডিওলজি বিভাগের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয় সেতুমন্ত্রীকে। সেখানে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে কার্ডিওলজি বিভাগের দোতলায় সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। একপর্যায়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের (ভেন্টিলেশন) সাহায্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। হাসপাতালে আনার পরপরই চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রথমে সিটি স্ক্যান ও পরে এনজিওগ্রাম করা হলে ওবায়দুল কাদেরের হৃদযন্ত্রের তিনটি রক্তনালিতে (আর্টারি) ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। পরে তার চিকিৎসায় বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
Share this content: