ধর্মলিড নিউজ

করোনার সংকটকালে কাবার ইমাম শাইখ শুরাইমের বিশেষ নির্দেশনা

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন– পুণ্যভূমি আমাদের এই প্রিয় দেশসহ পুরো মুসলিম দেশসমূহে মর্মন্তুদ যে মহামারী দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন; যা সবাইকে ব্যথিত করে তুলেছে। কোনো সংশয় ছাড়াই আমাদের এতে ইমান রাখা দরকার যে, এটি আল্লাহর পক্ষ হতেই একটি সিদ্ধান্ত। যেসব দিয়ে আল্লাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। যেমনটি আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি। এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।(সুরা আম্বিয়া-৩৫) আর আমরা এটিই বলব– হে ভাইয়েরা। এটি আল্লাহর ফয়সালা, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। আল্লাহ বলেন, আমার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। (সুরা কাসাস-৬৮)

যেহেতু আল্লাহ আমাদের ইসলামের মতো সুমহান এক নিয়ামত দান করেছেন। তাই আমাদের উচিত– তার সৌন্দর্যমণ্ডিত নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলি দিয়ে কায়মনোবাক্যে তার কাছে মিনতি করা। যেন তিনি এই মুসিবতকে আমাদের নিকট থেকে উঠিয়ে নেন এবং আমাদের ক্ষমা ও সুস্থতার নিয়ামত দান করেন।

প্রিয় ভাইয়েরা! প্রথমে আমি আপনাদের সতর্কতামূলক যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো– সুস্থতার প্রথম সোপান নিজেদের সচেতনতার মাঝেই নিহিত। যে সচেতন হলো সে অবগত হলো। অবগত হওয়া ব্যক্তিই পালনে সচেষ্ট হয়। আর যে পালন করল, সেই নিরাপদ রইল। এই মুহূর্তে সেই শ্রেষ্ঠ, যে এখনও সুস্থতায় আছে। সুস্থতার সমপর্যায়ের আর কিছু হতে পারে না। তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতার নিবেদন করুন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা চাও। কেননা সুদৃঢ় ইমানের পর সুস্থতা হতে উত্তম কোনো কিছু প্রাপ্ত হতে পারে না। (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৫৮) এসব যা ঘটে গেল, তার ওপর ভিত্তি করে বলতে হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজেদের মাঝে স্থাপন করে নেব এবং যাকে এই সময়ে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হচ্ছে, তা হলো– দায়িত্বে নিয়োজিত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা গ্রহণ ও পালনে কোনো ধরনের অবহেলার সুযোগ নেই। বাস্তবিকভাবেই আমরা একটি সমষ্টির অংশবিশেষ। প্রত্যেকেই একেকটি বৃষ্টিফোঁটার ন্যায়। যখন এসব বৃষ্টিফোঁটা জমা হবে, তখন একটি বিশাল স্রোতপ্রবাহ তৈরি করবে। সেসব দিয়ে আমাদের ওপর আপাতত মুসিবতকে ধুয়ে দেব। এসবের ওপর ভিত্তি করেই সবার প্রতি একটি নিবেদন রাখছি। তা হলো– যথাসম্ভব দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে ধ্বংসাত্মক এই মহামারী হতে রক্ষায় উপযোগী নানা উপায় অবলম্বন করা। প্রত্যেকেই তার সাধ্যপরিমাণ দায়িত্বশীল। দায়িত্বটি কিন্তু মহান। আর এতে অবহেলা দেখানোটাই বড় ত্রুটি। তাই এটি গুরুতর হওয়ার আগে নিজেদের সুরক্ষায় সামান্যও অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীন আচরণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা বিজ্ঞজন সবাই এ বিষয়ে ঐকমত্য যে, প্রতিরক্ষা প্রতিষেধক হতে উত্তম।

কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের অনেকেই আজ এটাকে সাধারণভাবে মোকাবেলা করছে। না দৃষ্টি রাখছে নিজের সুরক্ষার বিষয়ে, না সমাজের সুরক্ষার প্রতি। মূলত যে সুস্থতা তার নিজের সুদৃঢ় ভিত্তির একটি ইট। তাই আমরা এ বিষয়ে নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, যদি অন্য কোনো কারণ না পাওয়া যায়, তা হলে অবহেলাকারীই এসব প্রাণনাশের একমাত্র কারণ। অতএব সে এবং তার মতো অবহেলাকারী অন্যরা যেন জেনে রাখে, এগিয়ে আনা তো দূরের কথা, বরং তারাই কিন্তু সুখের দিনগুলোর আগমনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। অতএব ওই ব্যক্তির কথা কী বলবেন, যে সুস্থতা ও আরোগ্যতা চাইছে, তো সে কেন সুস্থতার পথ অবলম্বন করে না? যেমন বলা হয়ে থাকে, তুমি মুক্তির পথ চাইছ, অথচ সে পথে হাঁটছ না। তাই এ মুহূর্তে আমাদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত এবং নানা উপায় অবলম্বনের অংশ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা। আর এটি বাস্তবে অন্যভাবে সামাজিক ঘনিষ্ঠতার একটি। ঘরে থাকার বিষয়টি ব্যক্তিকে তার স্ত্রী সন্তানকে একত্রিত করে দেয়।

আর আমাদের ঘরে থাকা এবং নানা দিকনির্দেশনা মেনে চলা দায়িত্বে অভিজ্ঞতা লাভের একটি অংশ। সঙ্গে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিজেদের হক প্রদানের একটি সুবর্ণ সুযোগ, যার চর্চা অতীতে আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিল না। তাই আমাদের নিজেদের প্রতি এবং নিজেদের পরিবারের প্রতি নানা কর্তব্য রয়ে গেছে।

হে দ্বীনি ভাইয়েরা!

এই করোনা মহামারী আক্রমণকারী বাঘের ন্যায়। পলায়ন ছাড়া তার আক্রমণ হতে মুক্তি মিলবে না। ঘরে আবদ্ধ থাকা ছাড়া তা হতে পলায়নের কোনো গন্তব্য নেই। যেমনটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কুষ্ঠ রোগী হতে বাঘের থাবা হতে পলায়নের ন্যায় পলায়ন করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ৯৭২০)

মূল বক্তব্য: সিনিয়র ইমাম ও খতিব, মসজিদুল হারাম ও মক্কার উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

অনুবাদ: নাজমুল হুদা, শিক্ষার্থী, উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button