জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর গল্প

এবিএনএ : একমাত্র শিশুপুত্র রাফিদুলের জন্যই গ্রামে ফিরে আসা। ছেলেটির কথা বলার সমস্যা ছিল। চিকিৎসক বলেছিলেন, তাকে খোলামেলা পরিবেশে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দিলে কথা বলতে পারবে। তাই ঢাকা থেকে একেবারে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের নওদাবাস গ্রামে। সেখানে পৈতৃক বাড়ির ৪০ শতক জায়গায়ও পেলেন। প্রথমে ইটের দালান তৈরি করবে বলেই মনস্থ করেছিলেন। খরচ বেশি ও পরিবেশের ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এল। অতঃপর সিদ্ধান্ত, বাড়ি হবে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরে।

রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন দম্পতি


লালমনিরহাট বিসিকের প্লাস্টিকের বোতল বিক্রেতা হামিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘আমি জীবনেও শুনি নাই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি হয়। রাশেদুল আলম আমার কাছ থেকে কয়েক হাজার প্লাস্টিকের খালি বোতল কিনেছেন। এতে আমার ব্যবসা ভালো হয়েছে।’

বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে থাকা মিস্ত্রিদের কাছেও এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। রাজমিস্ত্রি দীনহরি চন্দ্র রায় (৪০) বলেন, ‘সারা জীবন ইট দিয়া বাড়ি বানালাম, এবার প্লাস্টিকের বোতলে কাজ করলাম। আমি ভীষণ খুশি, সবাই কাজ দেখার জন্য আসে, ছবি তোলে, ফেসবুকে দেয়।’

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, প্লাস্টিকের বোতলে বালি ভরে বাড়ি নির্মাণে নির্মাণ খরচ কম। এ ধরনের বাড়ি নির্মাণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কারিগরি সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে আরও গবেষণা ও নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে।


রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন বলেন, এ ধরনের বাড়ি শীত ও গ্রীষ্মকালে পরিবেশ অনুকূল থাকবে। অর্থাৎ শীতকালে উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকালে শীতল থাকবে।

এ জন্য তিনি পর্যাপ্ত জায়গা উন্মুক্ত রেখেছেন। এ ছাড়া প্লাস্টিকের বোতলে বালি ভরা থাকায় আগুন ও বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। কখনো আগুন লাগলে তা অন্যত্র ছড়াবে না। বরং যেখানে আগুন লাগবে, সেখানকার বোতলের বালুতে আগুন নিভে যাবে। বাড়িটি নির্মাণে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে বলে তাঁরা জানান।

 

বোতল দিয়ে বানানো সেফটিক ট্যাংক

বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান জোয়ারদার বলেন, এখানে আগুন লাগলে ছড়ানোর আশঙ্কা কিছুটা কম। এটি পরিবেশবান্ধব এ জন্যই যে এখানে ব্যবহার করা বোতল প্রকৃতিতে মিশে যেত। এই ফেলে দেওয়া উপাদান দিয়ে বাড়ি বানানোটা অভিনব।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button