বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

ঐক্যফ্রন্টে ভাঙন, জোট ছাড়লেন কাদের সিদ্দিকী

এবিএনএ : সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে গঠনের নয় মাসের মাথায় ভাঙন দেখা দিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। জোট ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। আগের রাতে দলের নীতি নির্ধারকতা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। জোটের ঐক্যফ্রন্টের কার্যকারিতা এবং তৎপরতা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার দলের বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীরা নিজেদের এমন মনোভাব তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সত্য কথা বলতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। এর কোনও কর্মকাণ্ড নেই। সেজন্য সেখান থেকে আমরা চলে আসছি। বের হয়ে যাচ্ছি বা আমাদের প্রত্যাহার করছি, এই শব্দটা ব্যবহারের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হয় নাই। সেজন্য তাদের খোঁজার কথাটা বলেছি। তাদের মাথা থেকে ঝেরে ফেলেছি। এর অর্থ আপনি যেটা বলেছেন, সেটাকেই বোঝায়।’

‘জাতীয় কোনো সমস্যাকে তারা তুলে ধরতে পারছে না। এরকম একটি জোট যে আছে তা দেশের মানুষ জানেই না।’ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নেওয়া ঐক্যফ্রন্ট যতগুলো সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ভোটের পর, তার বেশিরভাগেই তারা অটল থাকতে পারেনি। কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া জোট কোনো কর্মসূচিই দেয়নি। শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে সংসদে গেছে। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচনের পরে ড. কামাল হোসেনের প্রয়োজন ছিল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও পুনর্নির্বাচনের দাবি করা। এটাই ছিল জাতির প্রত্যাশা। কিন্তু তা না করায় জাতি হতাশ হয়েছে।’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া, পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও আপত্তির কথা জানান কাদের সিদ্দিকী। বলেন, ‘কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন তার নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি। এমনকি মনোনয়নের কাজগপত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়নি। তা দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে। এতে বোঝা যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি।’

আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে দুই দশকে রাজনীতিতে অবস্থান করে নিতে না পারা দলটির সাবেক নেতা নিজেদের আগামীর ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার  চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সকল সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুর করবে।…আমরা সব সময় দেশবাসীর কাছে বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা অব্যহত থাকবে।’

২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গঠন হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সবচেয়ে বড় দল বিএনপি হলেও জোটের প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন। অন্য দল ও সংগঠনগুলো ছিল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীও শুরু থেকেই ছিলেন এই জোটে। পরে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মইনুল হোসেন। গত ৫ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন সাবেক কাদের সিদ্দিকী। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে খেলাপি ঋণ থাকায় সেটা সম্ভব ছিল না। পরে তার মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী সেখান থেকে লড়ে পরাজিত হন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button