এ বি এন এ : মাত্র ২০৮ রানের পুঁজি। এই রান নিয়ে লড়াই করতে হবে বোলারদের। ব্যাটসম্যানরা হয়েছেন ব্যর্থ। বোলাররা কি পারবেন বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে? বিশাল এক প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষায় ছিল পুরো বাংলাদেশ।
কিন্তু ক্যাচ মিস, স্ট্যাম্পিং মিস, ফিল্ডিং মিসের মহড়া দিয়ে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হেরেই যেতে হলো বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে অপেক্ষা বাড়লো শততম ম্যাচ জয়ের।
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেই অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়েই ২০৮ রান নিয়েও জিততে পারতো বাংলাদেশ; কিন্তু একের পর এক ক্যাচ মিস, স্ট্যাম্পিং মিসের খেসারত দিতে হলো। আফগানরাও সহজ জয়ের লক্ষ্য পেয়ে দেখে-শুনে, উইকেট ধরে রেখে এবং ভালো বলগুলো খেলে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এলো নিজেদের। তিন ম্যাচের সিরজ জয়ে গেলো ১-১ সমতা। শেষ ম্যাচটি পরিণত হলো ফাইনালে।
এক পাশ থেকে একা সাকিব আল হাসান লড়াই করলেন; কিন্তু সেই যে ক্যাচ মিস আর স্ট্যাম্পিং মিস- তাতেই তার সব লড়াই বিফলে গেলো। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন; কিন্তু ২০৮ রান নিয়ে আর কতই বা লড়াই করা যায়!
যদিও শুরুতেই আফগান ব্যাটসম্যানদের ওপর ঝড় তুরে দিয়েছিলেন স্পিনার সাকিব আল হাসান। অধিনায়ক মাশরাফি নিজে বোলিং ওপেন করতে আসেন এক প্রান্ত থেকে। অপর প্রান্তে ওপেন করার জন্য বল তুলে দেন অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানের হাতে।
প্রথম তিন ওভার ভালোই দেখে-শুনে খেলতে থাকে আফগান দুই ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ এবং নওরোজ মঙ্গল। তবে, চতুর্থ ওভারে এসে (নিজের দ্বিতীয় ওভার) সাকিবের ঘূর্ণিবিষে নীল হতে শুরু করে আফগানিস্তান। ওভারের চতুর্থ বলে এসে সাকিবের ইনসুইং বুঝতে পারেননি তিনি। অপ্রস্তুত হয়ে ব্যাটে বল লাগিয়ে তুলে দিলেন কভার অঞ্চলে। তালুবন্দি করলেন তাইজুল ইসলাম। ১০ রান করে নওরোজ মঙ্গল।
ওভারের শেষ বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন রহমত শাহ। আগের ম্যাচেই এই ব্যাটসম্যান ৭১ রান করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু আজ সাকিবের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়ে গেলেন কোনো রান না করেই।
এরপর হাশমতুল্লাহ শহিদিকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন অপর ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। তিনি নিজেও রান তুলতে থাকেন দ্রুত গতিতে। ৪টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন শাহজাদ। জুটি গড়েন ৪৫ রানের। তবে শেষ পর্যন্ত ১৪তম ওভারে এসে জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই নিলেন উইকেট। ফেরালেন হাশমতুল্লাহ শহিদিকে।
এরপর আবারো সাকিব ধামাকা। এবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের হাতে বিদায় নিলেন মারকুটে ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ। ৩৫ রানে তিনি আউট হয়ে যান সাকিবের বলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
সাকিব-সৈকতের বোলিং তোপের ঝাঁঝ কাটিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি আফগানদের। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আসগর স্টানিকজাই আর মোহাম্মদ নবি মিলে আফগানিস্তানকে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের বোলাররা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও রয়ে-সয়ে খেলেছেন স্টানিকজাই আর নবি।
শেষ দিকে এসে মাশরাফি ঝড় তুলেছিলেন। ভাঙলেন ১০৭ রানের জুটি। ৪৯ রান করা মোহাম্মদ নবিকে ফিরিয়ে দেন। এরপর মোসাদ্দেকের ঘূর্ণিতে ফিরে যান ৫৭ রান করা আসগর স্টানিকজাই। তবে শেষ দিকে নজিবুল্লাহ জাদরান ২২ রান করে আফগানদের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দেন।
তবুও ৪৮তম ওভারে তাইজুল দুই রান দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন; কিন্তু ৪৯তম ওভারে এসে মোসাদ্দেক ৯ রান দিয়ে আফগানদের জয় সহজ করে দেন। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল দুই রান। নজিবুল্লাহকে তাসকিন আউট করে দিলেও জয় আর আটকাতে পারেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড
টস : আফগানিস্তান
বাংলাদেশ ২০৮/১০, ৪৯.২ ওভার (তামিম ২০, সৌম্য ২০, মাহমুদুল্লাহ ২৫, মুশফিকুর রহিম ৩৮, সাকিব আল হাসান ১৭, সাব্বির রহমান ৪, মোসাদ্দেক হোসেন ৪৫*, মাশরাফি ২, তাইজুল ১০, তাসকিন ০, রুবেল ১০, অতিরিক্ত ১৭; রশিদ খান ৩/৩৫, মোহাম্মদ নবি ২/১৬, মিরওয়াইজ আশরাফ ২/২৩, রহমত শাহ ১/৩০, নাভিন-উল হক ১/৪৯)।
আফগানিস্তান ২১২/৮, ৪৯.৪ ওভার (মোহাম্মদ শাহজাদ ৩৫, নওরোজ মঙ্গল ১০, রহমত শাহ ০, মোহাম্মদ শহিদি ১৪, আসগর স্টানিকজাই ৫৭, মোহাম্মদ নবি ৪৯, নজিবুল্লাহ জাদরান ২২, রশিদ খান ৫, মিরওয়াইজ আশরাফ ৯, দৌলত জাদরান ৪, অতিরিক্ত ৭; সাকিব আল হাসান ৪/৪৭, মাশরাফি ১/৩১, মোসাদ্দেক ২/৩০, তাসকিন ১/৩২)।