লাইফ স্টাইল

একটু ছোঁয়ায়…

এবিএনএ : বসন্ত বাতাসে আজ ভালোবাসার গান। রঙে-রঙে সেজেছে প্রকৃতি। মধুগন্ধি ফুলেল হাওয়ায় প্রাণ আনচান প্রকৃতিতে, বাংলার কোন দূরদেশ গাঁয়ে বাউল আবদুল করিম গেয়ে ওঠে_ ‘বসন্ত বাতাসে সই লো, বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…’। বাউলের সেই সুর এসে আছড়ে পড়ে ইট-পাথরের নগরে-বন্দরে। যেখানে এমন দিনে নাগরিক রবীন্দ্রনাথ গেয়ে গেছেন ‘ভালোবাসি ভালোবাসি_/ সেই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি’। অন্যদিকে রোমান সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মোৎসর্গের মানবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ইউরোপ থেকে ভেসে আসে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসের গান। প্রকৃতিতে যখন ভালোবাসার গান, সেখানে মানবিক প্রেমের এই সুর যেন ‘এক বৈকুণ্ঠের দিকে’ ছুটে চলেছে। এ গান যেখানে সত্য। ভালোবাসার গান।
এ গান যেখানে সত্য

ভালোবাসার জন্য একটি দিন। তার আগেও রয়েছে নানা প্রস্তুতি। চকোলেট ডে, প্রপোজ ডে ইত্যাদি পেরিয়ে তবেই না আসে ভালোবাসার দিন। প্রশ্ন হলো_ ভালোবাসা কি এভাবে বলেকয়ে, তারিখ গুনে হয়? তা হয়তো হয় না। যে কথাটি বলার জন্য মন-প্রাণ খোঁজে অনুক্ষণ, তা বলার তো একটা উপলক্ষ পাওয়া গেল। বিশেষ একটা দিনকে কেন্দ্র করে যদি স্থির হয়ে আসা পুরনো প্রেম একটু ঢেউ ওঠে তবে ক্ষতি কী। বাণিজ্য? তা তো কিছুটা হবেই। আর কে না জানে বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। দিন না ছোটখাটো কোনো উপহার, অন্তত একটা গোলাপ। কিছুটা না হয় ব্যাণিজ্য হলোই। কিংবা কপালের কালো তিলটি ছুঁয়ে বহুদিনের সঙ্গী ছেলেটি মেয়েটিকে আরেকবার বলুন ভালোবাসি। মেয়েটি ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে বলুন, ‘তুমি আছ, আমি আছি’। দেখুন কেমন ম্যাজিক খেলে যায়। আটপৌরে বসার ঘরটি হয়ে উঠবে ‘উষ্ণ বকুলতলা’।
ভালোবাসা কারে কয়
সারারাত একটুও ঘুম আসেনি। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে একটা গানই নানাজনের কণ্ঠে, ভিন্ন গায়কীতে বারবার শুনেছে_ তবু তৃষ্ণা মেটে না। বিক্ষিপ্ত মন শান্ত হয় না সুমির। হবে কী করে? কাল সারাদিন রাসেলের দেখা নেই। মোবাইল, সুইচ অফ। ফেসবুক বন্ধ। ঝগড়া তো বন্ধুদের সঙ্গে কতই হয়, তাই বলে এমন লাপাত্তা! আর সুমির নিজেরই বা এমন হবে কেন? বাইরে আলো ফুটতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির ঝলমলে সকাল। সুমি জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকায়। সামনের পলাশ গাছটা কমলা রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে। তার ওপর ভোরের আলো পড়ে যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে। কয়েকটা শালিক ফুলের ওপর মনের আনন্দে নাচানাচি করছে। অন্যদিন হলে সুমিও খুশিতে নেচে উঠত। কিন্তু আজ বুকের ভেতর হঠাৎ করেই মোচড় দিয়ে ওঠে। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি তুলে একটা ব্যথা মেরুদণ্ড বেয়ে নিচের দিকে নেমে গেল। সুমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কোনো রকমে নিজেকে সামলে বিছানায় বসে পড়ে। ইউটিউবে তখনও বেজে চলেছে_ ‘দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি…’ এরই নাম বুঝি ভালোবাসা।

আদি থেকে বর্তমান_ ভালোবাসা নিয়ে এই যে মাতামাতি। এত গল্প, কবিতা, গান, আখ্যান, উপন্যাস, মান-অভিমান, এমনকি যুদ্ধ। কিন্তু সেই ভালোবাসা আসলে কী? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ প্রশ্ন রেখেছেন_ ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়।/ সে কি কেবলি যতনাময়’। আবার তিনিই বলেছেন_ এ বাণী, প্রেয়সী, হোক মহীয়সী ‘তুমি আছ, আমি আছি’।

উইকিপিডিয়া বলছে, ‘ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা’। কবি রফিক আজাদ ভালোবাসার সংজ্ঞা করেছেন এভাবে, ‘ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,/পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;/ ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,/বিরহ-বালুতে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি’। আর তরুণ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভালবাসা মানে শুধুই দুজন? বাকি সব পর? ভালবাসা মানে সবাই আপন তুমি আমি যাযাবর।’ এমনি কত কত সংজ্ঞা ভালোবাসার। একেকজনের কাছে একেকভাবে ধরা দিয়েছে। কাজেই এর সংজ্ঞা খোঁজার চেয়ে ভালো, ভালোবাসা অনুভব করা।

ভালোবাসা এইভাবে হয়
ভালোবাসা কীভাবে হয়_ এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও কঠিন। অবশ্যই ব্যক্তিগত ভালোলাগা থেকে পছন্দ, বন্ধুত্ব, তারপর ভালোবাসা। এই প্রক্রিয়ার নেই কোনো সময়সীমা। কিন্তু একসময় নিজেই অনুভব করবেন আপনি প্রেমে পড়েছেন বা ভালোবাসা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত। কবি নাসিমা সুলতানা এভাবে বলেছেন_ ‘বকুল ফুলের মতো দুঃখের ঘ্রাণে ভরে যায় বুক/ ভালবাসা হতে হতে চোখের পাতায় পড়ে কলাপাতা রোদ্দুর/ভালবাসা হতে হতে রক্তকরবী গাছে বিমূর্ত জ্যোৎস্না/ ভালবাসা হতে হতে ব্রিজের ওপর এক আলোকিত ট্রেন/ ভালবাসা এইভাবে হয়’।

মনোযোগটা অকারণেই একটা কেন্দ্রে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। কিছু সময় না দেখলেই কী যেন নেই অবস্থা। ভুল-ত্রুটিগুলো গৌণ হয়ে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে তার ভালো গুণগুলো। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ঠিক সময় বের করা যাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ছোটখাটো সুবিধা-অসুবিধাতেও। বুঝবেন আপনি আক্রান্ত ভালোবাসায়। অপেক্ষায় থাকুন বিপরীতজনেরও একই রকম লক্ষণ প্রকাশের। এখন বললেই তো আর ভালোবাসার লক্ষণ দেখা দেবে না। এ জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রবাদ আছে, রণে আর প্রেমে নাকি ‘নীতি’ বলে কিছু নেই। তবে মিথ্যা বলে নিজের প্রতি অনুরাগ তৈরি করার চেয়ে সত্যটা তুলে ধরাই সবসময় নিরাপদ। তা না হলে সত্য বেরিয়ে এলে সম্পর্কের চিড় অবশ্যম্ভাবী এবং চিরকালীন।

একবার সম্পর্ক হয়ে গেলে দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততায় অনেকে ভাবেন, বিশেষভাবে সময় দেওয়ার কী আছে। ভালোবাসার মানুষটি ঠিক বুঝবে। কিন্তু সেই ব্যস্ততা তো আপনার সঙ্গীটি উপেক্ষাও ভাবতে পারে। তাতেও সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়ে। তাই সবসময় প্রয়োজন সম্পর্কে ছোট ছোট যত্ন। আর সেই যত্ন নেওয়ার বিশেষ দিনটিই হতে পারে আজ_ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।
মডেল : জেমি ও নেহরীন

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button