এবিএনএ : লোকে ভাবে, সাফল্যই সুখের আকর। কিন্তু সাফল্য কী? টাকাপয়সা, ক্ষমতা ও খ্যাতি কুড়োনোর মধ্যেই সাফল্য সীমাবদ্ধ? তাহলে এসব অর্জনের পরও একজন মানুষের হৃদয়ে ধূসর শূন্যতা সৃষ্টি হয় কীভাবে? এর কারণ বোধ হয় মানুষের তুলনা করার প্রবণতা। অন্যের বিত্তবৈভব আর খ্যাতির সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে ছোট করে দেখার চোখটা তো মানুষেরই।
সাফল্য মানে কি শুধুই এসব? এর বাইরেও এমন কিছু চিহ্ন রয়েছে, যা সফলতার ইঙ্গিতবাহী। মানে, এসব চিহ্ন থাকলে ধরে নেওয়া যায় আপনি সফলতার রাস্তায় হাঁটছেন। আসুন, জেনে নিই তেমন নয়টি চিহ্ন সমন্ধে—
ক্রমাগত নতুন অভিজ্ঞতার খোঁজ
বলা হয়, মানুষ অভিজ্ঞতাপিপাসু। কিন্তু এখন বোধ হয় সবাই সে রকম নয়। কিছু মানুষের কাছে কাঠামোবদ্ধ জীবনই বেশি প্রিয়। তবে যাঁরা নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার খোঁজ করে থাকেন, তাঁদের জন্য সুখবর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রবার্ট ক্লোনিঞ্জার, ‘নিজের রোমাঞ্চপ্রিয় ও কৌতূহলনির্ভর মনকে যদি আপনি অন্যের জন্য কাজে লাগান, তাহলে মানুষ ও সমাজ সেখান থেকে উপকৃত হবে এবং আপনার সফলতাও নিশ্চিত।’ অর্থাৎ নিজের রোমাঞ্চ ও কৌতূহলী মনকে অন্যের জন্য কাজে লাগালে সফল হওয়া স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
জীবনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
অনেকে কাজের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। অনেকে জীবনের জন্য কাজ বেছে নেন। কর্মক্ষেত্রে মনোযোগী হতে আমরা ব্যক্তিগত অনেক আশা-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ইচ্ছা-অনিচ্ছাও বিসর্জন দিতে হয়। সফল মানুষেরা কিন্তু এ রকম নন। তাঁদের কাছে জীবনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও তাঁরা মূল্য দেন। মানে, পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে জীবন উপভোগের পাশাপাশি যাঁরা কাজও করেন, তাঁরাই সত্যিকারের সফল মানুষ।
অন্যের সফলতায় সুখী
কর্মক্ষেত্রে আমরা অন্যের সফলতায় খুব কম ক্ষেত্রেই খুশি হতে পারি। কিংবা এমন মানুষ খুব কম, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নিংড়ে অন্যকে খুশি করার কাজে লিপ্ত। একটা ‘বিজনেস টিম’-এর কথাই ধরুন, সেই দলটি সফলতায় কিন্তু ন্যূনতম একজনের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। যে নিজেকে নিংড়ে গোটা দলটিকে সফল করতে চায়। এতে সহকর্মীরা খুশি হয় এবং তাতে করে সেই মানুষটিও তাঁর সহকর্মীদের সন্তুষ্টি দেখে সুখী হয়। যাঁরা এমন মনোভাব পোষণ করেন—ধৈর্য ধরুন, সাফল্য নিকটেই।
সহমর্মিতা
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী কিংবা অধস্তন কর্মীর সমস্যা বুঝতে পারা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ;যদিও অপরের সমস্যা আক্ষরিক অর্থেই আপনি ধরতে পারবেন না, নিজে কখনো সেই সমস্যায় না পড়েন। সফল মানুষেরা সব সময় এ ব্যাপারটা বুঝতে চান। তাঁরা সব সময় কর্মীর সমস্যা অনুধাবনের চেষ্টা করে থাকেন। এই সহমর্মিতাসুলভ মানসিকতাই মানুষকে কর্মক্ষেত্রে সফল করে তোলে।
নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণের ক্ষুধা
মানুষের স্বভাবই হলো অন্যের কাছে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা। তাতে কি খুব বেশি লাভ হয়? বরং প্রতিদিন একটা লক্ষ্য স্থির করে নিজের কাছে নিজের ইচ্ছাশক্তি কিংবা পরিশ্রমের মানসিকতা প্রমাণ করতে পারলে সাফল্য নিকটবর্তী হয়। সফল ব্যক্তিরা কিন্তু সব সময়ই নিজের মনকে লক্ষ্যে দেন—এই করতে হবে, সেই করতে হবে। সেই লক্ষ্যপূরণ করে তাঁরা নিজেকে নিজের কাছে প্রমাণ করে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। ধারাবাহিকভাবে এ কাজই মানুষকে সফলতা এনে দেয়।
সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের রুটিন বর্জন
অফিসে কিংবা কর্মক্ষেত্রে একটা বাঁধাধরা সময় থাকে। সেটা হতে পারে সাত থেকে আট ঘণ্টা। সফল মানুষেরা কিন্তু সব সময় এই রুটিন মেনে কাজ করেন না। তাঁরা বুদ্ধি খরচ করে কম সময়ে বেশি কাজ বের করে নেন। বাকি সময়টা অন্য কাজে লাগান। সেটা হতে পারে অন্য কোনো কাজ, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা প্রাণবন্ত আড্ডা। তাঁদের কাজ হলো প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণের উপলক্ষ, সেটা যত দ্রুত সম্ভব নিখুঁতভাবে সারতে পারলে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। অফিসের বাইরে কাজকে টেনে নেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়। একটু কৌশলী হলে নিজের ব্যক্তিজীবনের ওপর প্রভাব না ফেলেও অফিসের টুকটাক কাজ করে ফেলাই যায়।
টাকা কোনো পুরস্কার নয়, দায়িত্ব
সফল মানুষদের কাছে টাকাপয়সা কোনো ব্যক্তিগত অর্জন নয়। টাকাপয়সা আয়কে তাঁরা ব্যবসার গণ্ডি বাড়ানো কিংবা কর্মীদের উন্নতির পথ হিসেবে দেখে থাকেন। এর বাইরে বড়জোর ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য টাকাপয়সা কাজে লাগান তাঁরা। আসলে এসব মানুষের জীবনে ভোগবিলাস ব্যাপারটা দৈনন্দিন জীবনপ্রণালির মধ্যে সহজাতভাবেই ঢুকে পড়ে। জীবনের মানদণ্ড ধরে রাখতে তাঁরা এ ব্যাপারগুলো কখনোই নিজের ওপর আরোপ করেন না।
‘বিশেষ’ কেউ নন
আত্ম-অহংকার কমবেশি সবার মধ্যেই আছে। সেই অহংকার থেকে অনেকে জনসমক্ষে অন্যকে অপমান করে মজা পান। সফল মানুষেরা কিন্তু হেঁটে থাকেন উল্টো পথে। তাঁদের কাছে সফলতা মানে লক্ষ্যে অবিচল থাকার ফসল। যেখানে তাঁর কর্মীদের অবদান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং সৌভাগ্যের ছোঁয়াও দরকার হয়েছে। সফল মানুষেরা এসব ব্যাপার মেনে নিয়ে কখনোই নিজেকে ‘বিশেষ’ কেউ বলে মনে করেন না। মনে রাখবেন, যে গাছে ফল বেশি ধরে, সেই গাছ তত নত হয়।
সাফল্য ক্ষণস্থায়ী কিন্তু সম্মান চিরকালীন
জীবনে সাফল্য থাকলে ব্যর্থতা থাকবেই। সফল মানুষেরা এটা জানেন। তাই নিজের সাফল্যে তাঁদের গরিমা খুব কম। এর বদলে কর্মীদের সঙ্গে ভালো আচরণ এবং তাঁদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করাই সফল মানুষদের ধ্যানজ্ঞান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আশপাশের সবাইকে তাঁরা সম্মান ফিরিয়ে দেন সম্মান পাওয়ার বিনিময়ে।