জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

অস্ত্রোপচারে আলাদা তোফা-তহুরা ভালো আছে

এবিএনএ : গাইবান্ধার জোড়া লাগা জমজ শিশু তোফা ও তহুরাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছে। দুই দফায় দীর্ঘ সাত ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদেরকে আলাদা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সফল অস্ত্রোপচারের পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিশু দুটির জ্ঞান ফিরে আসে। তারা এখন সুস্থ আছে। দুজনকেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুই দফায় দীর্ঘ সাত ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের ১৬ জন চিকিৎসক দুটি দলে ভাগ হয়ে অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়।
বেলা আড়াইটায় প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার শেষে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ শিশু দুইটির স্পাইনাল কর্ড, মেরুদণ্ড, পায়ুপথ ও প্রস্রাবের রাস্তা আলাদা করা হয়েছে। এখন তারা পুরোপুরি আলাদা। দুজনের শারীরিক অবস্থাই স্থিতিশীল। এখনও রিপেয়ারের কিছু কাজ বাকি আছে। সেজন্য আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।’
অস্ত্রোপচারে আলাদা তোফা-তহুরা ভালো আছে
দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার শেষে শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশু দুইটি এখন পুরোপুরি আলাদা। প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়। পরে অস্ত্রোপচার করা স্থানগুলো রিপেয়ার করা হয়েছে। তাদের জ্ঞান ফিরেছে। তারা দুজনেই ভালো আছে। তাদের বর্তমানে আইইসিইউতে রাখা হয়েছে।’
অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে জানিয়ে ডা. আশরাফুল হক আরও বলেন, ‘অস্ত্রোপচার সফল হলেও তাদের এখনও ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। কারণ তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।’ তাই হাসপাতালে দেখতে গিয়ে অযথা ভিড় না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।অস্ত্রোপচারে আলাদা তোফা-তহুরা ভালো আছে
অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া কয়েকজন চিকিৎসক জানান, অপারেশন থিয়েটারে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করে তাদের আলাদা করা হয়। এরপর দুটি আলাদা অপারেশন থিয়েটারে রেখে চিকিৎসকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে তাদের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। জন্মের পর থেকে তোফা ও তহুরা জোড়া লাগা অবস্থায় ১০ মাস একসঙ্গে বড় হয়েছে। তাদের পিঠের কাছ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুজনের পায়ুপথও ছিল অভিন্ন। তবে মাথা, হাত, পা আলাদা ছিল। তোফা ও তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘পাইগোপেগাস বলা হয়।
ঢামেকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পাইগোপেগা’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে অন্যান্য হাসপাতালে তিন জোড়া শিশুকে আলাদা করা হলেও তাদের ধরন ছিল আলাদা।
জন্মের আট দিনের মাথায় শিশু দুটিকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে প্রথম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রস্তুতির পর মঙ্গলবার জমজ শিশু দুটিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেন চিকিৎসকরা।

অস্ত্রোপচারে আলাদা তোফা-তহুরা ভালো আছে
সকালে অস্ত্রোপচার শুরুর পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি থাকলেও আমরা আশাবাদী। শিশু দুটির মধ্যে তোফা বেশি সক্রিয় এবং তহুরা একটু কম সক্রিয়।’
তবে অস্ত্রোপচারের পর তারা সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঢামেক পরিচালক। জমজ শিশু দুটির বাবা রাজু মিয়া ও মা শাহিদা বেগম গাইবান্ধার বাসিন্দা। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে তারা অপেক্ষা করছিলেন। দুই সন্তানের সুস্থতার জন্য সবার কাছে তারা দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button